গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে স্বামী এবং পুত্র-সহ তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বীরভূমের সেই অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে কি দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? কেন্দ্রের কাছে জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট।
বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি, স্বামী দানিশ শেখ এবং তাঁদের বছর পুত্রসন্তান কয়েক বছর ধরে ধরে দিল্লির রোহিণী এলাকার ২৬ সেক্টরে থাকতেন। দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে সোনালি ও তাঁর পরিবার কাগজকুড়ুনি এবং গৃহ-পরিচারিকার কাজ করে আসছিলেন। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন তাঁদের আটক করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। অভিযোগ, সোনালির গোটা পরিবারকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সোনালির পরিবারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতারও করেছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই হাই কোর্টকে দ্রুত সোনালির মামলা শোনার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
বুধবার উচ্চ আদালতের বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের মামলাটির শুনানি হয়। সোনালির পরিবারের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী জানান, সোনালিরা বীরভূমেরই বাসিন্দা। প্রমাণ হিসাবে জমির নথি, সোনালির বাবা এবং ঠাকুরদার ভোটার কার্ডও জমা করা হয়েছে। সোনালির আট বছরের সন্তানের জন্মের শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে আদালতে।
শুনানিতে দিল্লি পুলিশের হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী ধীরাজ দ্বিবেদী। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, ‘‘সোনালিদের ফিরিয়ে আনার কতটা সম্ভবনা রয়েছে?’’ এর প্রেক্ষিতে ধীরজ জানান, সোনালিরা আদৌ ভারতীয় কি না, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখনও সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি।
দিল্লি পুলিশ সোনালিদের পাকড়াও করে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে, এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছিল পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। পরে কলকাতা হাই কোর্টে সোনালির বাবাও হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করেন। এই মামলা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছিলেন দিল্লি পুলিশের আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, এই মামলায় পক্ষেরা হল দিল্লি পুলিশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস। এই তিন প্রতিষ্ঠানই দিল্লিতে রয়েছে। ফলে এই মামলার শুনানি কলকাতায় হওয়ার কথা নয়। পাশাপাশি, সোনালির বাবা দিল্লি হাই কোর্টের মামলার বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টকে কিছু জানাননি বলেও অভিযোগ তুলেছেন ধীরাজ। সব শোনার পর পর এই মামলায় রায়দান স্থগিত রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
সোনালি ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর সন্তান ভিন্দেশে জন্মালে শিশুর নাগরিকত্বজনিত কারণে দেশে ফেরায় জটিলতা বাড়তে পারে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। বীরভূমের পাইকরে সোনালির মামাতো ভাই রকি শেখ বলেন, ‘‘দিদি আসন্নপ্রসবা না হলে এত দুশ্চিন্তা হত না। কিন্তু ও দেশে সন্তানের জন্ম দিলে আইনি জটিলতা বেড়ে যাওয়া নিয়েই দুশ্চিন্তা।’’