মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিচারব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ অঙ্কের কত টাকা দিয়েছে রাজ্য? বুধবার এই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে বকেয়া বরাদ্দ নিয়ে অবস্থান জানাতে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সময় বেঁধে দিল আদালত। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবর পুজোর ছুটির মধ্যে রাজ্যের অর্থসচিব, বিচারবিভাগীয় সচিব এবং হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বৈঠক করতে হবে। সে দিন বৈঠক অসম্পূর্ণ হলে দ্বিতীয় বৈঠক করতে হবে। আগামী ২২ অক্টোবর হবে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক।
কত বকেয়া রয়েছে হিসাব কষে টাকা দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ওই বৈঠকের পরে রাজ্যকে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। হাই কোর্ট জানিয়েছে, বকেয়া-সহ পুরো বিষয়ে আগামী ২৭ অক্টোবর রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবকেই। এই নির্দেশ কোনও ভাবেই যেন অগ্রাহ্য করা না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, রাজ্য টাকা না দেওয়ায় আদালত পরিচালনা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ থমকে রয়েছে এই অভিযোগের শুনানি চলছে হাই কোর্টে। বকেয়া টাকা নিয়ে মুখ্যসচিব পন্থকে তলব করে আদালত। হাই কোর্ট এবং নিম্ন আদালতগুলির জন্য বরাদ্দ বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।
বুধবার এই মামলার শুনানিতে রাজ্য জানায়, ওই সব প্রকল্পের টাকা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আদালত সময় দিক। ওই আবেদন শুনে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘প্রতিটি জেলা বিচারকের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা থাকার কথা। এখন একটি টাকাও নেই। গত চার দিন ধরে একই কথা বলে যাচ্ছি। অথচ বিষয়টি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলার পরেও কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। এটা কী ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি করছে?’’ রাজ্যের উদ্দেশে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘মোট বাজেটের একটি সামান্য অংশ বিচারব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ করা হয়। সেটিও যদি না পাওয়া যায় কী ভাবে চলবে? বরাদ্দের কতটা অংশ দিয়েছে রাজ্য? ভাববেন না রাজ্যের কাছে আমরা দয়া চাইছি। এটা রাজ্যের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিচার বিভাগের প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলছি।’’
ওই মন্তব্যের পরেই আদালত রাজ্যের অনুরোধ মেনে আলোচনার জন্য সময় বেঁধে দেয়। তার মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় আদালত। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানিপর্বে মুখ্যসচিব পন্থ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ হাজির হয়ে জানিয়েছিলেন, আদালত উন্নয়নের খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। নিম্ন আদালত এবং হাই কোর্টের ১৪টি প্রকল্পের কাজে ওই অর্থ ব্যয় হবে। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থ দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুখ্যসচিবের এই উত্তরে বিচারপতিরা সন্তুষ্ট হননি। কারণ আরও ৫৩টি প্রকল্পের কথা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল।