দেরিতে সুবিচার, এখন আর কী হবে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোতুলপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২২
Share:

বিমলেন্দু মণ্ডল

cap

Advertisement

বিমলেন্দু মণ্ডল

Advertisement

বেকসুর খালাস। কিন্তু, সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট যাঁর মুক্তি ঘোষণা করল, তিনি বছর দেড়েক আগেই মারা গিয়েছেন। ১২ বছর জেলখাটা বাঁকুড়ার কোতুলপুরের কারকবেড়িয়ার সেই বিমলেন্দু মণ্ডলের ছেলেরা বলছেন, ‘‘আগে রায় হলে আমাদের সংসারটা হয়তো তছনছ হত না।’’

আত্মীয়-পড়শিদের একাংশ জানাচ্ছেন, দারিদ্রের কারণে প্রান্তিক চাষি বিমলেন্দুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী অণিমা মণ্ডলের মাঝেমধ্যেই অশান্তি হত। ২০০২-এর ১৩ অগস্ট বাড়ির কাছে ডোবায় অণিমার দেহ মেলে। দেহের নানা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিন দিন পরে দাদা গণেশ ঘোষ বিমলেন্দুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। জেল হয় বিমলেন্দুর। গণেশ দুই ভাগ্নে—সাত বছরের বলরাম ও পাঁচ বছরের কৃষ্ণকে নিয়ে যান বাড়ি জয়রামবাটির জয়কৃষ্ণপুরে।

২০০৪ সালে বাঁকুড়া আদালত বিমলেন্দুকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিমলেন্দু। হাইকোর্ট তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে। কিন্তু শুনানি শুরু হতেই পেরিয়ে যায় এক যুগেরও বেশি। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।

সরকারি তথ্যে জানা যায়, গত বছর হাইকোর্টে মামলাটি ওঠে। আসামী পক্ষের আইনজীবী না থাকায় আদালত অপলক বসুকে ‘আদালত বান্ধব’ হিসেবে মামলার দায়িত্ব দেয়। তিনি সওয়াল করেন, অস্ত্র দিয়ে মারার অভিযোগ থাকলেও তা উদ্ধার করা যায়নি। ময়না-তদন্তে বিষের নমুনা পাওয়ার কথা বলা হলেও ডোবায় থাকা মিথেন গ্যাসেও বিষক্রিয়া হতে পারে। বিচারপতি মহম্মদ মুমতাজ খান এবং বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ বিমলেন্দুকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার বিমলেন্দুর দাদা অমলেন্দু জানান, ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে জেলে হৃদরোগের সমস্যা হওয়ায় বিমলেন্দুকে কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। অমলেন্দুর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, এক দিন সুবিচার পেয়ে ভাই ফিরবে। সুবিচার এলো, ভায়ের মৃত্যুর পরে! এখন আর কী হবে?’’ এখনও মামার বাড়িতেই থাকেন সদ্য যুবা বলরাম ও কৃষ্ণ। তাঁরা বলেন, ‘‘বাবা-মা কাউকেই কাছে পেলাম না। পৈতৃক বাড়িতে আর ফিরব না।’’ অভিযোগকারী গণেশবাবু বলেন, ‘‘কাজে মন ছিল না বিমলেন্দুর। বোনের সঙ্গে অশান্তি হত। বোনের দেহে চোট দেখে মনে হয়েছিল, বিমলেন্দুই খুন করেছে। মামলা নিয়ে আর খোঁজ নিইনি।’’

‘আদালত বান্ধব’ অপলক বসু বলেন, ‘‘আসামীর পরিজনেরা গোড়াতেই লিগাল এড সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আগেই আইনজীবী পেতেন। তাতে সুবিধা হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন