—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
ওবিসি সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকাশের আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মেধাতালিকা। তা বাতিল করে ফের নতুন করে মেধাতালিকা তৈরির নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৌশিক চন্দ নির্দেশ দিয়েছেন, ২০১০ সালের আগের ৬৬টি ওবিসি সম্প্রদায়ের তালিকার ভিত্তিতেই নতুন মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বোর্ডকে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে বোর্ড।
রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা (জেইএমএএস পিজি ২০২৪)-য় সংরক্ষণ নীতি নিয়ে বিতর্ককে কেন্দ্র করে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে।
২০২৪ সালের ২২ মে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে জানায়, ২০১০ সালের পরে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি শ্রেণিকে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া বেআইনি। ২০১০ সালের পরে দেওয়া ওই দুই শ্রেণির সকল ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয় আদালত। হাই কোর্ট জানায়, ২০১০ সালের আগে যে ৬৬টি শ্রেণি ওবিসি হিসেবে স্বীকৃত ছিল, তারা সাত শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা পাবে।
চলতি বছর হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, বোর্ডকে নতুন করে জয়েন্টের মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। সেখানে ৬৬টি শ্রেণির জন্য সাত শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে। ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি শ্রেণির প্রার্থীদের ডাকা যাবে না।
ওবিসি মামলার মূল রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। আবার তারই মধ্যে গত ১০ জুন তারা নতুন একটি সংরক্ষণ নীতি চালু করে। যেখানে ১৪০টি শ্রেণিকে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওবিসি-এ শ্রেণির জন্য বরাদ্দ হয় ১০ শতাংশ সংরক্ষণ। আর ওবিসি-বি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ হয় সাত শতাংশ সংরক্ষণ।
রাজ্যের এই নতুন নীতির বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবার মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গত ১৭ জুন হাই কোর্ট নতুন সংরক্ষণ নীতি স্থগিত করে দেয়। আগামী ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ বৃদ্ধি হয়।
হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। গত ২৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্টের নির্দেশের উপর। আগামী ১১ অগস্ট সেখানে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্টের ওই অন্তর্বতী নির্দেশের পরে ৩০ জুলাই বোর্ড একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ডব্লিউবিজেইই-২০২৫ পরীক্ষার্থীদের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস আপডেট করতে হবে। কারণ, মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে ১০ জুনের নতুন সংরক্ষণ নীতি অনুযায়ী। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, বোর্ড পুরনো নির্দেশ অমান্য করে নতুন নীতির ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করার কথা জানিয়েছে। অথচ, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে পরীক্ষার ফর্ম ফিল-আপ হয়েছিল। পরীক্ষা হয়েছিল এপ্রিল মাসে। আর নতুন নীতি চালু হয়েছে ১০ জুন। সুতরাং, কোনও ভাবেই আগের পরীক্ষার উপর সেই নীতির প্রভাব পড়তে পারে না।
বাতিল হওয়া ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি শ্রেণির শংসাপত্র দিয়েই মেধাতালিকায় সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে।
হাই কোর্ট জানায়, গত ২১ মে-র নির্দেশ সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছে। বাতিল হওয়া সার্টিফিকেটকে বৈধ ভাবে গ্রহণ করেছে, যা আইনের পরিপন্থী।
বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশ—
এক, নতুন করে মেধাতালিকা তৈরি করতে হবে। শুধুমাত্র ২০১০ সালের আগে স্বীকৃত ৬৬টি ওবিসি শ্রেণির জন্য সাত শতাংশ সংরক্ষণ দিতে হবে।
দুই, এই কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
তিন, এই বিষয়ে বোর্ডের রেজিস্ট্রার এবং শিক্ষা দফতরের এক জন সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারি (শীর্ষ বিশেষ সচিব)-কে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে।
চার, যে হেতু রাজ্য ওবিসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে, তাই এই মুহূর্তে আদালত অবমাননার মামলা শুরু হচ্ছে না।
পাঁচ, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এই নির্দেশনামা পাঠাতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে এই নির্দেশ রাজ্যের সব দফতরে পৌঁছে যায়। এবং আগামী দিনে কোনও নতুন ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে এই নির্দেশ যেন মেনে চলা হয়।