TET 2014

ওএমআর-তথ্য না পেলে টেট-২০১৪ বাতিল করে দেব! সিবিআইকে সতর্ক করলেন বিচারপতি মান্থা

২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা দিয়েছিলেন কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে চাকরি পেয়েছিলেন ৬০ হাজার। আর এই ২০১৪ সালের টেটেই কারচুপির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৫
Share:

বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার হুঁশিয়ারি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

ওএআমআর শিটের আসল তথ্য না খুঁজে পেলে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষাটিকেই বাতিল করে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘‘ডিজিটাল তথ্য সহজে নষ্ট হয় না। মুছে ফেললেও তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পৃথিবী থেকে মঙ্গলে গেলেও ওই তথ্য পাওয়া যেতে বাধ্য। তার পরও যদি তথ্য হাতে না আসে, তবে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করতে বাধ্য হবে আদালত।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের টেটে পরীক্ষা দিয়েছিলেন কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে চাকরি পেয়েছিলেন ৬০ হাজার। আর এই ২০১৪ সালের টেটেই কারচুপির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। রাহুল চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৪ সালের টেটের পরে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেআইনি ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। মঙ্গলবার সেই মামলারই শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি মান্থার বেঞ্চে। মামলাকারীদের তরফে হাজির ছিলেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তাঁরাই ওএমআর শিটের আসল তথ্য না পাওয়ার বিষয়টি জানান বিচারপতিকে। যা শোনার পরই টেট মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি মান্থা।

২০১৪ সালের টেট সংক্রান্ত মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। বিচারপতি মঙ্গলবার সিবিআইয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ওএমআর শিটের আসল তথ্য খুঁজে বার করতে। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কোথায় রয়েছে, তার সন্ধান করতে শুরু করুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মঙ্গলবারের মধ্যে অতিরিক্ত রিপোর্ট দিয়ে সংক্ষেপে জানাতে হবে, নিয়োগে কী ভাবে হয়েছিল? কোথায় দুর্নীতি হয়েছে।’’

Advertisement

২০১৪ সালের টেটে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হলে আদালতকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছিল, ওএমআর শিটের আসল নথি বা হার্ডকপি নষ্ট করা হয়েছে। বদলে ডিজিটাইজ়ড ডাটা হিসাবে ওই সব তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মান্থা তাঁর পর্যবেক্ষণে সে কথাও উল্লেখ করেছেন। বিচারপতি বলেন, ‘‘পর্ষদের দাবি সব ওএমআর শিট ডিজিটাইজ়ড ডাটা হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে হেমন্ত চক্রবর্তী নামে এক পরীক্ষার্থীকে ওএমআরের প্রতিলিপি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট থাকার কথা।’’

বিচারপতির প্রশ্ন, তার পরও ওএমআর শিটের তথ্য পাওয়া যাবে না কেন? মঙ্গলবার তাই তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে তাঁর নির্দেশ, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞান বলছে তথ্য মুছে ফেললেও তা পুনরুদ্ধার সম্ভব। অর্থাৎ, ওএমআর শিটের তথ্যও পাওয়া যেতে পারে। আর ওই সব তথ্য সিবিআইকে খুঁজে বার করতে হবে। যদি তার জন্য হার্ডডিস্ক, অন্য কোনও সূত্রের প্রয়োজন হয়, তবে প্রয়োজনে পর্ষদ অফিসেও যেতে পারবে সিবিআই।’’

প্রসঙ্গত, এর আগে প্রাথমিকের ওএমআর শিট সংক্রান্ত মামলাগুলি শুনেছিলেন হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ইস্তফা দেওয়ায় মামলাগুলি যায় বিচারপতি মান্থার এজলাসে। মঙ্গলবার বিচারপতি মান্থাকে সিবিআই জানিয়েছিল, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে ৩০৪ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট ফাইল করা হলেও চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়া হয়নি। যার জবাবে বিচারপতি জানান, এই মামলার সিবিআইয়ের অনেক রিপোর্টই এজলাসে আসেনি। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ওই সব রিপোর্ট এজলাসে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে বলেন বিচারপতি। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন