— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত সব আবেদন খারিজ হয়ে গেল উচ্চ আদালতে! বুধবার রায় দিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিল, এসএসসি-র বিজ্ঞপ্তিতে কোনও হস্তক্ষেপ নয়।
এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ মামলার রায় ঘোষণা শুরু হয় বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চে। তাতে এসএসসির বিজ্ঞপ্তি এবং বিধিকে চ্যালেঞ্জ করে যে সব আবেদন ডিভিশন বেঞ্চে করা হয়েছিল, তার সব ক’টিই খারিজ হয়ে গিয়েছে।
রায় ঘোষণার পর রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা রাজ্যের বড় জয়! রাজ্যের অধিকারকে মান্যতা দিল আদালত। সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলে দেয়নি ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া মেনে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অযৌক্তিক আবেদন আদালত মেনে নেয়নি। গত ন’বছরের মধ্যে কত জন এসেছেন, তাঁদের কথাও বিবেচনা করতে হবে।’’
সোমবার ডিভিশন বেঞ্চে ওই বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয়। রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত। এসএসসির তরফে ছিলেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন অনিন্দ্য মিত্র এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সওয়াল করতে গিয়ে এজি দত্ত যুক্তি দেন, ২০১৬ সালের পর ২০১৯ সালে নিয়োগবিধি তৈরি করা হয়েছিল। এখনকার নিয়োগবিধিটি ২০২৫ সালের। এজি বলেন, ‘‘২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় ২০১৯ সালের নিয়োগবিধির পরে এসেছিল। তখন সেই বিধিকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ফলে কেউ এসএসসির নিয়োগবিধিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।’’ এসএসসির নির্ধারিত মূল্যায়ন বিধি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও নিয়োগপ্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের যোগ্যতামান কী হবে, তা নিয়োগকারীই নির্ধারণ করে। ফলে কী কী যোগ্যতা থাকা প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে এসএসসি। যে কোনও চাকরিতে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
অন্য দিকে, কল্যাণও বলেন, ‘‘কী ভাবে কমিশনের আইনকে চ্যালেঞ্জ করা যায়? হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শুধু বলেছে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কোন বিধি মেনে করতে হবে বলেনি। কোথায় বলা আছে ২০১৬ সালের বিধি মেনেই নিয়োগ করতে হবে?’’ এসএসসির তরফে আরও যুক্তি দেওয়া হয়, ২০১৬ সালের বিধি মেনে বয়সে ছাড় দেওয়া কার্যত সম্ভব ছিল না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মান্যতা দিয়ে ওই বিধি সংশোধন করতেই হত। যদিও মামলাকারীর আইনজীবীরা দাবি করেন, বিধি সংশোধন করা হোক বা না-হোক, এসএসসির ভুলেই আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। মামলাকারীদের তরফে অনিন্দ্য বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলে দেয়নি নতুন নিয়োগ শুরু হলে যোগ্যতামান বদল করতে পারবে এসএসসি।’’
প্রসঙ্গত, ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের নিয়োগপরীক্ষার নতুন বিধি প্রকাশ করেছিল এসএসসি। নতুন পরীক্ষাবিধিতে নানা বদলও আনা হয়েছিল। তা নিয়েই মামলা হয় হাই কোর্টে। মামলাকারীদের দাবি ছিল, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিধি ২০১৬ সালের মতোই করতে হবে। উল্লেখ্য, নয়া বিধিতে বলা হয়েছিল, এ বার ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে, আগে যা ৫৫ নম্বরের ছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে ৩৫ নম্বরের পরিবর্তে রাখা হয়েছিল সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে ১০ নম্বর, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর উপর সর্বোচ্চ ১০ নম্বর করে রাখা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির হিসাবে যাঁদের বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছর, তাঁরাই নিয়োগের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন বলেও জানিয়েছিল এসএসসি। বুধবার শেষমেশ এসএসসির সেই সিদ্ধান্তকেই মান্যতা দিল উচ্চ আদালত।