বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে স্বামী, পুত্র-সহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে দেশে ফেরাতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত। এই নির্দেশ আপাতত মুলতুবি রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি বলে দাবি করে স্বামী এবং পুত্র-সহ সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি। সোনালি ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই হাই কোর্টকে দ্রুত সোনালির মামলা শোনার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, সোনালিদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল। কেন্দ্রকে অবিলম্বে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালি কাজের সূত্রে দিল্লিতে থাকতেন। স্বামী দানিশ শেখ এবং আট বছরের পুত্রকে নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির রোহিণী এলাকার ২৬ সেক্টরে থাকছিলেন সোনালি। প্রায় দুই দশক ধরে রাজধানীতে কাগজকুড়ুনি এবং পরিচারিকার কাজ করে আসছিলেন তিনি। পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুন বাংলাদেশি সন্দেহে হঠাৎই তাঁদের আটক করে দিল্লির কে এন কাটজু মার্গ থানার পুলিশ। তার পর সোনালি-সহ পাঁচ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে বাংলাদেশের পুলিশ সোনালিদের গ্রেফতারও করেছে বলে অভিযোগ।
বাংলাদেশে সোনালি বিবি এবং তাঁর পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
সোনালিদের আইনজীবী হাই কোর্টে জানিয়েছেন, তাঁরা বীরভূমের বাসিন্দা। বাংলাদেশের নন। প্রমাণ হিসাবে জমির নথি, সোনালির বাবা এবং ঠাকুরদার ভোটার কার্ডও জমা করা হয়েছে। সোনালির আট বছরের সন্তানের জন্মের শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে আদালতে। তবে দিল্লি পুলিশের যুক্তি, সোনালিরা আদৌ ভারতীয় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মত জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখনও সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি। দিল্লি পুলিশের তরফে প্রথম থেকেই দাবি করা হচ্ছে, এই মামলার শুনানি দিল্লিতে হওয়া প্রয়োজন। কারণ, মামলায় প্রধান পক্ষ দিল্লি পুলিশ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ফরেন রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস। এই তিন প্রতিষ্ঠানই দিল্লিতে রয়েছে। সোনালির বাবা কলকাতা হাই কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেছিলেন। তাতেই শুক্রবার নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত।
সোনালি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বাড়তি উদ্বেগ রয়েছে তাঁর পরিবারে। ভিন্দেশে সন্তান জন্মালে তার নাগরিকত্ব কী হবে, তার জন্য সোনালিদের দেশে ফেরায় জটিলতা বাড়বে কি না, প্রশ্ন রয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশে আপাতত স্বস্তিতে সোনালির পরিবার। তাঁর বাবা বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টকে আমার ধন্যবাদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সামিরুল ইসলাম না থাকলে আমার মেয়েকে ফেরাতে পারতাম না। ওঁরা ছিলেন বলেই ফেরত পাচ্ছি। দিল্লির পুলিশ অন্যায় কাজ করেছে। না জেনে না শুনে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার বাড়ি তো বীরভূমে, বাংলাদেশে নয়।’’ পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোনালিকে বাংলাদেশে পাঠানোর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। হাই কোর্টকে ধন্যবাদ সুবিচারের জন্য। ওঁদের দেশে ফেরানোর পর যা যা দরকার হবে, আমরা করব। সবরকম সাহায্য করব।’’