গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
খেজুরি জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় ১৭ জনের কল রেকর্ড দেখতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে কী ভাবে অত্যাচারের দাগ এল? একটি মেলার মধ্যে এত বড় ঘটনা ঘটল, অথচ কোনও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নেই?
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, নিশ্চিত সাক্ষীরা ভয় পাচ্ছেন। তদন্তকারীদের নির্দেশ, তাঁদের ভয় দূর করুন। বিচারপতিরা জানান, এই মামলায় কেস ডায়েরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাই কোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, এই মৃত্যু বৈদ্যুতিক পোল ভেঙে না-ও হতে পারে। কারণ, দেহে আঘাতের অনেক চিহ্ন রয়েছে, যা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে।
ঘটনায় দু’টি ভিন্ন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে আদালত। বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘‘দুই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আলাদা। দুই হাসপাতলের দুই রিপোর্ট। এমন হলে পুরো পদ্ধতির উপরে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস চলে যাবে।’’ এর পরেই সিআইডিকে আদালত জানায়, সন্দেহজনক সব মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডিং যাচাই করুন। চিকিৎসক, তদন্তকারী অফিসার এবং ওসি-সহ বাকি ১৭ জনের ফোন রেকর্ডিং খতিয়ে দেখতে হবে। আপাতত তদন্তের আওতায় এই ১৭ জনকে নিয়ে আসা হোক। হাই কোর্ট জানায়, সিবিআই তদন্তের বিষয়টি আদালত পরে বিচার করবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরদিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের কিছু দূরেই দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদের এক জনের নাম সুধীর পাইক, অন্য জন সুজিত দাস। পরিবারের দাবি, দু’জনের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। যদিও অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা দাবি করেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। একই দাবি করে শাসকদল তৃণমূলও। তবে বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ধর্মীয় কারণে খুন হয়েছেন ওই দুই যুবক। জোড়া মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতর। বিতর্ক শুরু হয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েও। অভিযোগ, প্রথমে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে পুলিশ জানায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তা মানতে না চেয়ে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মৃতদের পরিজনেরা। পরের বার ময়নাতদন্তে জানা যায়, দু’জনের দেহেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একই দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দু’বার দু’রকম আসে কী করে, তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। গোটা তদন্তের মোড়ও ঘুরে যায় ভিন্ন দিকে।