কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র।
কোনও ভিআইপি জেলায় লাল বাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে ঢুকলে পুলিশ সুপারের কাছে সেই খবর থাকে। কিন্তু তাঁর অধীন কোনও সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ থাকলে তার খবর পুলিশ সুপার জানবেন না কেন, এই প্রশ্ন তুলে দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপারকে সোমবার তিরস্কার করল কলকাতা হাইকোর্ট।
একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এক অভিযুক্তের আগাম জামিনের মামলায় দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপারকে আদালতে তলব করে সোমবার এ ভাবেই দুরমুশ করেছে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এক সপ্তাহের মধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা না-দিলে পুলিশ সুপার-সহ সংশ্লিষ্ট সব অফিসারের বিরুদ্ধে খুনের চক্রান্তে যুক্ত থাকা, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের একাধিক ধারায় মামলা করা হবে বলে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন হুঁশিয়ার করে দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২২ জানুয়ারি কিষাণগঞ্জের চার যুবক মোটরবাইক নিয়ে শিলিগুড়িতে বেড়াতে আসেন। পরের দিন তাঁদের মধ্যে অজিত সিংহ নামে এক যুবকের মৃতদেহ মেলে ফাঁসিদেওয়া থানা এলাকার মহানন্দা সেতুর তলায়। অজিতের পরিবার খুনের মামলা করে। এফআইআর দায়ের হয় নিহতের বন্ধু দীপককুমার সাউয়ের বিরুদ্ধেও। দীপক হাইকোর্টে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর আইনজীবী সাবির আহমেদ জানান, মামলার আবেদনে তাঁর মক্কেলের অভিযোগ, তদন্তকারী অফিসার অজিতের মোবাইল ফোন লোপাট করে দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে দার্জিলিঙের এক পদস্থ পুলিশ অফিসার বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে বলা হয়, তদন্তকারী অফিসার ওই মোবাইল ফোন নিয়ে কী করেছেন, পুলিশ তা জানে না। তাঁরা ফোন চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই অফিসার ফোন ফেরত দেননি। তা শুনে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৬ অগস্ট দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদীকে আদালতে হাজির হতে হবে।
সেই নির্দেশ অনুসারে পুলিশ সুপার এ দিন আদালতে হাজির হন। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘‘কাকে আড়াল করতে চাইছেন আপনারা? মৃত্যুর পরে সাত মাস কেটে গিয়েছে। কতটা কী তদন্ত হয়েছে? আজ যে-রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, সেটা তো লোকদেখানো। ৩ অগস্ট ডিএসপি রিপোর্ট দিয়ে জানালেন, ওই তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ আপনারা জানাচ্ছেন, ১২ জুলাই থেকে ওই অফিসার সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন! ব্যাপারটা ঠিক কী?’’