Calcutta High Court

‘আর্থিক জরুরি অবস্থা চলছে? রাজ্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ় করে দিতে বলব’! বকেয়া প্রাপ্য নিয়ে ক্রুদ্ধ কলকাতা হাই কোর্ট

কলকাতা হাই কোর্ট এবং বিভিন্ন নিম্ন আদালতের উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। অর্থের অভাবে কোনও কাজ এগোনো যাচ্ছে না। সেই সংক্রান্ত মামলায় এ বার রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিল উচ্চ আদালত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫৬
Share:

রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কলকাতা হাই কোর্ট এবং বিভিন্ন নিম্ন আদালতের উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। অর্থের অভাবে কোনও কাজ এগোনো যাচ্ছে না। সেই সংক্রান্ত মামলায় এ বার রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিল উচ্চ আদালত। বলল, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে রাজ্যের অ্যাকাউন্ট নম্বরই সিজ় করার নির্দেশ দেওয়া হবে।

Advertisement

আদালতের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজ্য কেন অর্থ বরাদ্দ করছে না, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার সেই মামলায় রাজ্যের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্ট নম্বর চায় হাই কোর্ট। আদালত বলে, ‘‘মুখ্যসচিবকে বলুন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে। আমরা সিজ় করার নির্দেশ দেব।’’

অভিযোগ, রাজ্য অর্থ বরাদ্দ না করায় আদালতের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। গত তিন বছর ধরে বিএসএনএল বিল দেওয়া হয়নি। পাঁচ কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বসাক বলেন, ‘‘প্রথম লাইনেই মিথ্যা কথা বলছেন। গত তিন বছর ধরে বিল বকেয়া। রাজ্যে কি আর্থিক জরুরি অবস্থা চলছে? বিল না দেওয়ার কারণে বিএসএনএল যদি পরিষেবা বন্ধ করে দেয়, তখন কী হবে? তিন বছর যথেষ্ট সময়। বিল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। রাজ্যের কর্মীদের সঠিক ভাবে বেতন দিচ্ছেন না। হাই কোর্টের কাজে অর্থ বরাদ্দ কি প্রশাসনিক কাজের মধ্যে পড়ে না?’’

Advertisement

বিচারপতিরা রাজ্যের কাছে জানতে চান, রাজ্যের অ্যাকাউন্ট কোন ব্যাঙ্কে রয়েছে। রাজ্যের আইনজীবী জানান, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে রাজ্যে অ্যাকাউন্ট আছে। এর পরেই বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলছি কোনও টাকা না ছাড়তে। আদালতের অনুমতি ছাড়া যেন টাকা ছাড়া না হয়। বিএসএনএল সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কিছু বলার থাকবে না। হাই কোর্টের অবস্থা যদি এমন হয়, নিম্ন আদালতে কী হচ্ছে!’’

সোমবার এই মামলার শুনানি চলাকালীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থ দফতরের আধিকারিক। তাঁর কাছেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চান বিচারপতিরা। ওই আধিকারিক জানান, অ্যাকাউন্ট নম্বর তাঁর জানা নেই। এর পরেই বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বসে থাকব। জেনে এখনই বলুন। মুখ্যসচিবকে বলুন অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে।’’

অর্থ দফতরের আধিকারিক আদালতে জানান, রাজ্য দু’দিনের মধ্যে অর্ধেক টাকা মিটিয়ে দেবে। তা শুনে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন দু’দিন সময় লাগবে? এখন তো সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠানো যায়।’’ জবাবে আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের ছুটি রয়েছে। জবাব শুনেই ক্রুদ্ধ বিচারপতি বলেন, ‘‘ছুটি? আজ ছুটি? ইন্টারনেটের কি ছুটি? এই আদালত কি ছুটিতে? আজ যদি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়, কী হবে?’’

মামলার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন রাজ্যের আইনজীবী। তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি বলেন, ‘‘এক মাসের মধ্যে আমরা মিটিং করতে বলেছিলেন। কিছুই অগ্রগতি হয়নি। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন মুখ্যসচিব।’’ রাজ্য জানায়, আপাতত ৬০ লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়া হবে। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা বাক্‌রুদ্ধ। কিছু বলার নেই।’’ রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘দয়া করে একটু সময় দেওয়া হোক। বিলের ২.৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।’’ কিন্তু সেই টাকা আদৌ আদালতের হাতে এসেছে কি না, তা জানতে চান বিচারপতিরা।

রাজ্য জানিয়েছে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এই মামলায় সওয়াল করবেন। তাই একটু সময় দেওয়া হোক। এর প্রেক্ষিতে আদালত জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ নভেম্বর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement