রাজীবকে গ্রেফতারে বাধা নয় সিবিআইকে

এখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে শুক্রবার বিকেলেই ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে রাজীবের বাড়িতে নোটিস দিয়ে আসে সিবিআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

রাজীব কুমার।—ফাইল চিত্র।

‘তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না’— রাজীব কুমারের ক্ষেত্রে এই রক্ষাকবচ উঠে গেল শুক্রবার। কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই গ্রেফতারও করতে পারে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে।

Advertisement

তবে এখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে শুক্রবার বিকেলেই ৩৪ নম্বর পার্ক স্ট্রিটে রাজীবের বাড়িতে নোটিস দিয়ে আসে সিবিআই। রাজীব অবশ্য তখন বাড়িতে ছিলেন না। নোটিসে তাঁকে আজ, শনিবার সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, সারদা তদন্তে বহু প্রশ্নের উত্তর রাজীবের কাছে মেলেনি। তাঁকে সে সব নিয়ে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ঘনিষ্ঠ মহলের ধারণা, সোমবার পর্যন্ত নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেন প্রাক্তন সিপি। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করতে পারেন। যদিও গত ১৭ মে রক্ষাকবচ তুলে সুপ্রিম কোর্টই তাঁকে হাইকোর্টে পাঠিয়েছিল। ফলে, এ বার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কতটা ‘লাভ’ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।

Advertisement

শুক্রবার রাজীবকে ফোনে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁর জবাব মেলেনি। রাজীবের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ও মন্তব্য করতে চাননি।

তাঁকে পাঠানো সিবিআইয়ের আগের নোটিসের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে গত মে মাসে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন রাজীব। সেই মামলাতেই এ দিন বিচারপতি মধুমতী মিত্র রাজীবের আবেদন খারিজ করে তাঁর রক্ষাকবচ তুলে নেন। বিচারপতি মিত্র জানিয়েছেন, তদন্তের প্রয়োজনে যত বার খুশি রাজীবকে ডাকা যেতে পারে। এমনকি তদন্তকারী সংস্থা যদি মনে করে কেউ আদালতগ্রাহ্য অপরাধ করেছেন, তা হলে তাঁকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারও করা যেতে পারে। সিবিআইয়ের আইনজীবী ইয়েডেজার্ড জাহাঙ্গির দস্তুর এবং সম্রাট গোস্বামী জানান, গত ৩০ মে বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজীবকে ১০ জুলাই পর্যন্ত গ্রেফতার না-করতে। সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিল। তা-ই এ দিন তুলে নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিচারপতি মিত্র জানিয়ে দেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। মিলনবাবু এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, সারদা মামলায় বেছে বেছে তাঁর মক্কেলকেই বিব্রত করা হচ্ছে। সিবিআই ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেও অভিযোগ করা হয়। বিচারপতি মিত্রের পর্যবেক্ষণ— এই অভিযোগ ধর্তব্যযোগ্য নয়। কারণ, তদন্তের স্বার্থে আরও অনেক পুলিশ অফিসারকে ডেকেছে তদন্তকারী সংস্থা। রাজীব চেয়েছিলেন ‘অভিযুক্ত’ বলে তাঁকে গণ্য করতে হলে কোর্টের অনুমতি নিক সিবিআই। বিচারপতি বলেন, মামলায় রাজীব তৃতীয় পক্ষ। তাঁকে কোনও ‘বিশেষ মর্যাদা’ দেওয়া যায় না। সিবিআই তাঁকে ‘সাক্ষী’ হিসেবে ডেকে পাঠিয়ে ‘অভিযুক্ত’ বলে গণ্য করলেও আইনি বাধা নেই।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজীব কুমারের যা হওয়ার, হবে! কিন্তু তাঁকে বাঁচাতে যিনি ধর্নায় বসেছিলেন, তাঁকে কে বাঁচাবে?’’ বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করে যথাযথ তদন্ত হোক এবং দোষীরা শাস্তি পাক।’’ সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘নানা রকম রাজনৈতিক খেলা আছে। সিবিআই ডাকলেই গ্রেফতার করবে, তার মানে নেই।’’ রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ের কথায়, ‘‘বিজেপি নেতৃত্ব যে ভাষায় কথা বলেন, সেটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা ছাড়া কোনও রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ওদের নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন