ক্যানসার রোগীকে তাড়াল হাসপাতাল

অভিযোগ, এমনই এক রোগীকে কর্তব্যরত হাসপাতাল কর্মীরা বারবার গিয়ে বলছেন, ‘‘এখানে থাকা চলবে না। তোমার সঙ্গে থাকলে অন্য রোগীদের তো ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে! তাড়াতাড়ি চলে যাও।’’

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫০
Share:

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

মেডিসিন বিভাগের এক পাশে শুয়ে রয়েছেন রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত প্রৌঢ়। অভিযোগ, এমনই এক রোগীকে কর্তব্যরত হাসপাতাল কর্মীরা বারবার গিয়ে বলছেন, ‘‘এখানে থাকা চলবে না। তোমার সঙ্গে থাকলে অন্য রোগীদের তো ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে! তাড়াতাড়ি চলে যাও।’’

Advertisement

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুললেন আসানসোলের বাসিন্দা রামোজিপ্রসাদ গুপ্তের পরিবার। এ নিয়ে হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

রামোজিপ্রসাদের পরিবার জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে ভোর থেকে হাসপাতালের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক আগেই তাঁর মারণ রোগ নির্ণয় করেছিলেন। বহির্বিভাগের লাইন পেরিয়ে সে দিন চিকিৎসকের কাছে পৌঁছলে তিনি জানান, রক্তে ক্যানসারের দাপট আরও বেড়েছে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি। কিন্তু হেমাটোলজি বিভাগে বেড না-থাকায় তাঁকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ, পাঁচ দিন ধরে তিনি ন্যূনতম পরিষেবাটুকু পাননি। এ-ও অভিযোগ, তাঁকে ‘ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

Advertisement

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুধু পরিষেবা নয়, মানবাধিকার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, সরকারি হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট রয়েছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল হেলথ প্রোফাইল রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ১১৭০ জনপিছু একটি মাত্র শয্যা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ন্যূনতম পরিষেবা না-দিয়ে ক্যানসার রোগীর সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

রামোজির পরিবারের অভিযোগ, শনিবার তাঁকে শয্যা থেকে নামিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এমনকী দুপুরের পরে বিভাগ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ দিন রোগীর আত্মীয় অয়ন পাল বলেন, ‘‘কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। শুধু মানসিক অত্যাচার হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মীরা কখনও বলছেন অন্য রোগীদের ক্যানসার হয়ে যাবে আবার কখনও বলছেন, আধ ঘণ্টার মধ্যে মেডিসিন বিভাগ থেকে বেরিয়ে না গেলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে! এত দূর থেকে রোগীকে নিয়ে এসেছি। কোথায় যাব?’’

ইন্দ্রনীলবাবু অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এক বিভাগের রোগী আরেক বিভাগে ভর্তি হলে সমস্যা হয়। কিন্তু কোনও রোগীর সঙ্গে এমন আচরণ কখনও মেনে নেওয়া যায় না। অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। কোনও কর্মী খারাপ আচরণ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন