লাভ কম ফুলকপিতে, বাড়ছে ব্রকোলির চাষ

বারবার তিন বার। এই নিয়ে তিন বছর ব্রকোলির চাষ করলেন মহাদেব সরকার। ফুলকপির মতোই দেখতে এই সব্জি, তবে সবুজ ফুল। নেহাত কৌতূহল বশে চাষ শুরু করেছিলেন বাহিরি-পাঁচশোয়ার এই চাষি। প্রশিক্ষণ আর বীজ মিলেছিল বিশ্বভারতীর রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে। বললেন, ফুলকপির চাইতে বেশি লাভ পেয়েছেন প্রতিবারই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

বারবার তিন বার। এই নিয়ে তিন বছর ব্রকোলির চাষ করলেন মহাদেব সরকার। ফুলকপির মতোই দেখতে এই সব্জি, তবে সবুজ ফুল। নেহাত কৌতূহল বশে চাষ শুরু করেছিলেন বাহিরি-পাঁচশোয়ার এই চাষি। প্রশিক্ষণ আর বীজ মিলেছিল বিশ্বভারতীর রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে। বললেন, ফুলকপির চাইতে বেশি লাভ পেয়েছেন প্রতিবারই।

Advertisement

কেমন লাভ ব্রকোলিতে? মহাদেব বলেন, ‘‘কুড়ি কাঠা জমিতে ফুলকপির চারা লাগানো যায় ৬০০০। সেখানে ব্রকোলির চারা লাগিয়েছি ৮০০০। বীজের দাম বেশি হলেও, চাষের খরচ একই।’’ মহাদেববাবুর হিসেব, ওই ২০ কাঠা জমিতে তিনি ফুলকপি চাষ করে যেখানে লাভ করতেন ১০ হাজার টাকা, সেখানে ব্রকোলিতে লাভ প্রায় ২৫ হাজার টাকা।

রথীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের তরফে দুলালচন্দ্র মান্না জানান, বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের প্রায় ৪০জন চাষি ব্রকোলি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করছেন। গড়ে কাঠায় দেড় হাজার টাকা লাভ থাকছে। প্রতিটি ব্রকোলি আট টাকা থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। তিনি বলেন, বড় বড় রেস্তোরাঁ, হোটেল, শপিং মলে চাহিদা থাকায় এর বাজার ভাল। তিনি বলেন, ‘‘যখন ফুলকপি তোলায় সময় আসে, তখন একসঙ্গে অনেক কপি ওঠে। তাই দাম পায় না চাষি। যদি ফুলকপি চাষের সঙ্গে কিছু ব্রকোলি চাষ করে, তা হলে লাভ বেশি পাওয়া যাবে।’’ দুলালবাবু জানান, ‘গ্রিন ম্যাজিক’, ‘আইস ম্যাজিক’, ‘ফিয়েস্টা’ প্রভৃতি প্রজাতির ব্রকোলি চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁরা। কপির থেকে ব্রকোলির খাদ্যগুণও বেশি।

Advertisement

হুগলিতে ব্রকোলি চাষ প্রতি বছর বাড়ছে। ধনেখালি, শিবাইচন্ডি, নালিকূল, হরিপাল এলাকায় এই চাষ ছড়াচ্ছে। আরামবাগ বাদে অন্য তিনটি মহকুমাতেই এই চাষের জমি বাড়ছে প্রতি মরসুমে। এই চাষে অভ্যস্ত হুগলির এক চাষি বলেন, ‘‘বীজের দাম বেশি হলেও, একটি কপি গাছ থেকে অন্তত তিনটি কপি পাওয়া যায়। একবার গাছ থেকে কপি কেটে নিলে ফের সেই গাছ থেকে কপি বের হয়। এইভাবে তিনবার পর্যন্ত কপি মেলে একটি গাছ থেকে।’’ তবে চাহিদা থাকলেও পরিকাঠামোর জন্য বাজার দর পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ ক্ষপ ধনেখালির চাষি কাশীনাথ পাত্রের। তিনি বলেন, ‘‘ব্রকোলির প্রতি কেজি বীজের দাম ৫০ হাজার টাকা। বিদেশ থেকে ওই বীজ আনতে হয়। কলকাতার বাজারে পাঠাতে পারলে ভাল দাম পাওয়া যায়। কিন্তু সেই পরিকাঠামো কই?’’

বারাসত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাবপুর। সেখানে তিন বিঘে জমিতে ব্রকোলি চাষ করেছেন শংকর জানা। জানালেন, তাঁর মতো আরও ১২০ জন চাষি একসঙ্গে ‘বাবপুর কৃষক সংঘ’ তৈরি করেছেন। সংঘের ৫০জনেরও বেশি চাষি তাঁদের জমিতে ব্রকোলি চাষ করেছেন। ‘‘বছর তিনেক আগেও খুব কম চাষিই সাহস করে ব্রকোলি, রেড ক্যাবেজ বা চেরি টম্যাটোর মতো সব্জি চাষ করতেন। এখন কিন্তু অনেকেই ঝুঁকেছেন।’’ কেন? শংকরবাবু জানালেন, তাঁদের সংঘের চাষিদের জমির কাছেই রোজ সকালে গাড়ি আসে। সরকারি অনুদানে তাঁদেরই কেনা ওই গাড়িতে করে ব্রকোলি-সহ নানা সব্জি চলে যায় বিধাননগরের মার্কেটে। ব্রকোলির চাহিদা এমন যে গাড়ি পৌঁছনোর আগেই দাঁড়িয়ে থাকেন ক্রেতারা। এছাড়াও এয়ারপোর্ট, মাইকেল নগরের মতো জায়গায় নামী হোটেলগুলিতে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হয় ব্রকোলি। নিজের তিন বিঘে জমিতে এ বার ২০ হাজার পিস ব্রকোলি বিক্রি করেছেন। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে ৩০ হাজার টাকারও বেশি। তাঁর হিসেব মতো, ফুলকপির চাইতে লাভ হয়েছে দ্বিগুণ। ২০১৫ সালে শংকর উত্তর ২৪ পরগনার ‘সেরা চাষি’ পুরস্কারও পেয়েছেন কৃষি দফতর থেকে।

কিন্তু খাবার পাতে বাঙালি কতটা পছন্দ করছে ব্রকোলি? বাঙালি রেস্তোরাঁ ‘ভজহরি মান্না’-র মালিক সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘‘বাঙালি হেঁশেলে ব্রকোলি ব্যবহার বাড়ছে। এখন সব্জি ডালে ব্রকোলি দেওয়া হচ্ছে। সব্জির বিভিন্ন পদে ব্যবহার হচ্ছে।’’ এ ছাড়া গ্রামের দিকে বেসন দিয়ে ভেজে বড়া কিংবা পকোড়ার মতো করে ব্রকোলি খাওয়া জনপ্রিয় হচ্ছে। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘আগে বাঙালির কাছে ক্যাপসিকাম তেমন পছন্দের ছিল না, এখন নানা পদে তার ব্যবহার। সে ভাবে ব্রকোলিও একদিন ঘরে ঘরে সব্জির ঝুড়িতে ঠাঁই পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন