আদালতের পথে।নিজস্ব চিত্র
সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত প্রাক্তন পুলিশকর্তা রজত মজুমদার তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে এ দিন আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে অভিযোগ করেছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত এ দিন আদালতে বলেন, “রজতবাবু সারদার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। বহু ক্ষেত্রে তথ্য লোপাট করার চেষ্টাও তিনি করেছেন বলে আমরা তদন্তে জেনেছি।” আইনজীবীর অভিযোগ, রজতবাবুর আয়করের ব্যাপারে অনেক গরমিল ধরা পড়েছে। তিনি সারদার আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত বলে সিবিআই তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে আদালতে জানান পার্থসারথিবাবু।
সিবিআই যেমন তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে, তেমন রজতবাবুও আদালতে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজতবাবু বিচারককে বলেন, “আমাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে আইনগত ত্রুটি রয়েছে। গ্রেফতার করার সময় আমাকে সই করানো হয়নি।” বিচারক সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার ফণিভূষণ করণকে বিষয়টির ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন।
তদন্তকারী অফিসার জানান, ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটের সময় রজতবাবুকে জানানো হয়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পর তিনি স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে অনুরোধ করেন। ফোনে ওঁর সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তিনি শৌচালয়ে যান। ফিরে এসে ঘরের মধ্যেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন। এর পরে বিধাননগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসককে ডাকা হয়। চিকিৎসক এসে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সুপারিশ করেন। রজতবাবুকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জ্ঞান ফেরার পর তাঁর বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। তিনি সজ্ঞানেই ওই ছাপ দেন।
আদালতে তদন্তকারীর অফিসারের এই কথার কোনও প্রতিবাদ করেননি রজতবাবু। তবে সিবিআই গত বৃহস্পতিবার প্রথম যে দিন তাঁকে আদালতে হাজির করায়, সে দিনের দাপটের ছিটেফোঁটাও এ দিন রজতবাবুর মধ্যে দেখা যায়নি। ওই দিন আদালতের মধ্যেই তিনি রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার ও সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তদন্তকারী অফিসারকে শাসিয়ে বলেছিলেন, “যতই চেষ্টা করুন না কেন, মমতা-মুকুলকে সারদার টাকা দিয়েছি, তা আমাকে দিয়ে বলাতে পারবেন না।” এ দিন কিন্তু সারাক্ষণ চুপচাপ থাকার পর কাঠগড়ায় হাতজোড় করে তিনি বলেন, “আমাকে জামিন দেওয়া হোক। সিবিআই যখনই ডাকবে, তখনই হাজিরা দেব। তবে পুজোর কয়েক দিন ছাড় দিন।” কিন্তু বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায় তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেননি। বিচারক আগামী শুক্রবার পর্যন্ত রজতবাবুকে সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় কিছুটা ছলছলে চোখে মাথা নিচু করে কোর্ট লকআপের দিকে হেঁটে যান প্রাক্তন পুলিশকর্তা।