খেজুরির জোড়া মৃত্যু মামলায় সিবিআই তদন্তের আর্জি খারিজ কলকাতা হাই কোর্টে। — প্রতীকী ছবি।
খেজুরির জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি খারিজ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সিবিআই তদন্তের উপর আস্থা রাখতে যে তিনি পারছেন না, তা পরোক্ষ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি। শুনানিতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিবিআই এখন গ্যালারি শো করছে!’’ সিবিআইয়ের বদলে রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা রাখতে চান বিচারপতি।
খেজুরিতে জোড়া মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা। তবে বিচারপতি ঘোষের পর্যবেক্ষণ, এই ঘটনার তদন্ত করবে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। সিট গঠন করে জোড়া মৃত্যুর তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। ডিআইজি সিআইডির নেতৃত্বে গঠিত হবে সিট। বিচারপতি ঘোষ আরও জানিয়েছেন, ওই তদন্তকারী দলে থাকবেন হোমিসাইড শাখার অফিসারও। এক মাসের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আদালতে জমা দিতেও বলেছেন বিচারপতি ঘোষ। শুনানিতে মামলাকারীর আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এখন সিবিআই গ্যালারি শো করে। এই মামলাটি রাজ্য পুলিশই তদন্ত করবে।’’
গত ১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের অনতিদূরে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদের এক জনের নাম সুধীর পাইক, অন্য জন সুজিত দাস। পরিবারের দাবি, দু’জনের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। যদিও অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দাবি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। একই দাবি করে শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, ধর্মীয় কারণে খুন হয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে ঘটনাক্রমে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে নিয়ে পুলিশ জানায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরিবার তা মানতে নারাজ। তারা আবার ময়নাতদন্তের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।
বিচারপতি ঘোষের একক বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকের বক্তব্য রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় দুই পরিবার। ডিভিশন বেঞ্চ পরিবারের আর্জি মেনে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি জানানো হয়, ওই মামলাটি শুনবে বিচারপতি ঘোষের একক বেঞ্চই। সোমবার সেই শুনানিতে সিবিআই তদন্তের আবেদন করা হয়। তবে বিচারপতি ঘোষ তা মানতে চাননি। সোমবারের শুনানিতে বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণ জানান। যদিও কোনও নির্দেশ দেননি। মঙ্গলবার এই মামলায় নির্দেশ দেবেন বিচারপতি। আইনজীবীদের একাংশের মতে, বিচারপতির পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট, এই মামলার তদন্তভার রাজ্য পুলিশের হাতেই থাকবে।