মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজীব কুমার। সোমবার পুলিশের মেডেল প্রদান অনুষ্ঠানে। —নিজস্ব চিত্র
সঙ্ঘাতের সূত্রপাত তাঁকে ঘিরেই। তাঁর বাড়ি থেকেই কার্যত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ধর্নায় বসে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রাজীব কুমারকেও ধর্না শুরুর পর থেকেই মঞ্চের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না। শীর্ষ আদালত রায় দিতেই চলে এলেন ধর্না চত্বরে। পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা ছড়িয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বা রাজীব কুমার কেউই ‘বৈঠক’ নিয়ে মুখ খোলেননি।
সিবিআইয়ের জেরায় হাজির হতে হবে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে। তবে দিল্লি বা কলকাতা নয়, নিরপেক্ষ জায়গা হিসেবে শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আবার সিবিআই-এর আদালত অবমাননার মামলাতেও রাজীব কুমারকে নোটিস পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত।
রায়ের পর ধর্নামঞ্চ থেকে বক্তব্য এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী চলে যান মঞ্চের পিছনে পুলিশের আউটপোস্টে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, ওই আউটপোস্ট থেকে বেরিয়ে আসছেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। কিন্তু তিনি কখন এসেছিলেন, তা কারও নজরে পড়েনি। অনেকেই মনে করছেন, সংবাদ মাধ্যমের নজর এড়িয়ে তিনি পিছন দিক দিয়ে ওই আউটপোস্টে চলে আসেন। এর পর আউটপোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রীও।
আরও পডু়ন: গ্রেফতার নয়, রাজীব কুমারকে সিবিআই জেরায় বসার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
এ থেকেই রাজনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়েছে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে দু’জনের আলোচনার সম্ভাবনাও প্রবল। যদিও এ নিয়ে নীরব উভয় পক্ষই। মঙ্গলবার সকালের দিকেও অবশ্য এক বার তিনি ধর্না চত্বরে এসেছিলেন। তবে তখন সাদা পোশাকে ছিলেন রাজীব কুমার।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের জয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনেই ধর্নামঞ্চ থেকে বললেন মমতা
ধর্নার গোড়া থেকেই রাজীব কুমারের নিয়মিত উপস্থিতি চোখে পড়েছে ধর্না চত্বরে। মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেখানে চলে আসেন। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। কখনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করেছেন। পরের দিন সোমবার আবার ছিল কলকাতা পুলিশের বাৎসরিক মেডেল দানের অনুষ্ঠান। ফলে সোমবার দিনভর তাঁর ধর্না চত্বরে থাকার কারণও ছিল। এর পর মঙ্গলবার সকালেও এক বার ধর্না মঞ্চে এসেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আবার তিনি চলে আসেন ধর্না চত্বরে।
আরও পড়ুন: সারদাকর্তার কল রেকর্ডস বিকৃত করেছেন রাজীব কুমার, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা সিবিআইয়ের
আরও পডু়ন: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জয় হল সিবিআইয়ের, বললেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী
কিন্তু তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। পুলিশ কমিশনার হিসেবে মমতার রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে যেতে পারেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু সে সবে তিনি কার্যত কর্ণপাতই করেননি। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও যে সেই অবস্থান থেকে সরেছেন, বা সরবেন, এমন ইঙ্গিত মেলেনি। বরং রাজীব কুমার যে আগের অবস্থানেই অনড়, সেটাই স্পষ্ট।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)