গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সারদা কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন-সহ প্রধান অভিযুক্তদের মোবাইলের বিকৃত কল ডিটেলস রেকর্ড (সিডিআর) সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন রাজীব কুমার। সেই সিডিআর বিকৃত করার পাশাপাশি সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে, এমনটাই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জানাল সিবিআই।
এ দিন শীর্ষ আদালতে সারদা-রোজভ্যালি সমেত অন্যান্য চিট ফান্ড মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের ইওডব্লিউ-৪-এর এসপি পার্থ মুখোপাধ্যায় একটি অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করেন। সেই হলফনামায় তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, রাজীব কুমার ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি দমন আইনে অভিযুক্ত হওয়ার মতো অপরাধ করেছেন।
হলফনামার ১১ এবং ১২ নম্বর পরিচ্ছেদে তিনি শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন, গত বছর ২৮ জুন রাজ্য পুলিশের কাছে অনেক তদ্বির এবং অনুরোধের পর সুদীপ্ত সেন এবং প্রধান অভিযুক্তদের মোবাইলের কল রেকর্ডস সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন রাজীব কুমার। সেই সিডিআর এবং মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছ থেকে সিবিআই যে সিডিআর সংগ্রহ করেছিল তার মধ্যে বিস্তর ফারাক পাওয়া গিয়েছে। সিবিআইয়ের এসপি স্পষ্টই আদালতকে জানিয়েছেন যে ওই ফারাক থেকে স্পষ্ট, রাজীর কুমার ওই সিডিআর থেকে তথ্য বিকৃত এবং লোপাট করেছেন। সেই তথ্যপ্রমাণ এ দিন সিল করা খামে আদালতে জমা দেয় সিবিআই।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জয় হল সিবিআইয়ের, বললেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী
সিবিআই তাদের হলফনামায় জানিয়েছে, সারদার পাশাপাশি সিবিআই রোজভ্যালি তদন্ত শুরু করার সময়, রাজীব কুমার রোজভ্যালির বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে হওয়া এফআইআরের তথ্য গোপন করেছেন। তার ফলে রোজভ্যালি কাণ্ডে এ রাজ্যে কোনও এফআইআর নথিভুক্ত করতে পারেনি সিবিআই। মামলা শুরু করতে হয়েছে ওড়িশাতে। কারণ, সাধারণ ভাবে স্থানীয় থানাতে হওয়া অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই সিবিআই তাদের রেগুলার কেস বা মামলা নথিভুক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: আপাতত গ্রেফতার নয়, রাজীব কুমারকে সিবিআই জেরায় বসার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
সিবিআই তাদের হলফনামায় দাবি করেছে যে, সারদা, রোজভ্যালি এবং টাওয়ার গ্রুপের মতো চিটফান্ডের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের আর্থিক লেনদেনের তথ্য তাদের হাতে এসেছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজীব কুমার রাজ্য সরকারের তৈরি করা স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-এর অন্যতম প্রধান তদন্তকারী হিসেবে ওই সমস্ত চিটফান্ডের বিরুদ্ধে থাকা তথ্য গোপন করেছেন। শুধু তাই নয়, সিবিআইয়ের অভিযোগ, সিট তদন্তের সময় ওই চিটফান্ডের বিরুদ্ধে থাকা তথ্যপ্রমাণ নষ্টও করেছে। হলফনামায় তারা রবিবারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিবিআই আদালতকে জানিয়েছেন, রাজ্যের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার আধিকারিকেরা তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব না পালন করে তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্নায় বসে পড়েন।
হলফনামার শেষে সিবিআইয়ের এসপি আদালতে জানিয়েছেন, ওই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারকে অবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদ বা জেরা করা প্রয়োজন। সিবিআই এ দিন আদালতকে জানায়, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত তিন দফায় রাজীব কুমারকে তলব করা হয়েছিল। সিবিআই অভিযোগ করে, রাজীব কুমার হাজিরা দেওয়ার বদলে শাসক দলের সহযোগিতায় সিবিআইয়ের কাজে বাধা দিয়েছেন এবং সিবিআই আধিকারিকদের বারে বারে হেনস্থা করেছেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের জয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনেই ধর্নামঞ্চ থেকে বললেন মমতা
এ দিন শীর্ষ আদালত সিবিআইকে সেই জেরার অনুমতি দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা পঙ্কজ কুমার শ্রীবাস্তব বলেন, “আমাদের হাতে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত এবং অকাট্য তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।”
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy