Advertisement
E-Paper

‘শিবঠাকুরের মতো একগুঁয়ে, যা বলি, করে ছাড়ি’, সোমে নয়া দল ঘোষণার মুখে হুমায়ুনের নিশানা মমতাকে, ইশারা বাম-কংগ্রেসকে

তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক হুমায়ুন কবীর পূর্বঘোষণা মাফিক ২২ ডিসেম্বর দুপুরে নতুন দলের নাম ঘোষণা করবেন। বেলডাঙায় চলছে মঞ্চ গড়ার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে আনন্দবাজার ডট কম-কে জানালেন পরিকল্পনার কথা।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩২
Humayun Kabir

তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করার পরেই নতুন দল তৈরি করবেন বলে জানিয়েছিলেন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।

২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে আত্মপ্রকাশ করেছিল নয়া রাজনৈতিক দল, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। ৫ বছর পর আর একটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের আঙিনায় আবার একটি রাজনৈতিক দল। সেই দলের নাম ঘোষণার ঠিক আগেই প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবীরের হুঁশিয়ারি, ‘‘মমতা (বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং বিজেপিবিরোধী সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসন ভাগাভাগি করে লড়ব। কিন্তু কেউ যদি নিজেকে সকলের চেয়ে বড় মনে করেন, ‘ইগো’ নিয়ে থাকেন, তখন একাই লড়ব। দরকারে পশ্চিমবাংলার সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। সেই ক্ষমতা আছে।’’

মসজিদ গড়ার কথা ঘোষণা করে তৃণমূলের রোষানলে পড়েছেন। ‘স্বপ্নের বাবরি’র শিলান্যাস করার আগেই সাসপেন্ড হয়েছেন। রাগে-দুঃখে বিধায়কপদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলেছিলেন। শেষমেশ আর দেননি, ‘মানুষের কথা ভেবে।’ হুমায়ুনের সমালোচকেরা বলেন, এমন অনেক কথাই বলেন, মন থেকে বলেন না। আবার একটি ব্যাপারে তিনি একগুঁয়ে এবং এককাট্টা। সেটা হল দল, নিজের দল। ২২ ডিসেম্বর সেই দিন। সোমবার দুপুর ১টায় নিজের রাজনৈতিক দলের নাম এবং রাজ্য কমিটি ঘোষণা করতে চলেছেন দু’বারের বিধায়ক। স্বাভাবিক ভাবে রবিবার দম ফেলার ফুরসত নেই। চরম ব্যস্ততার মধ্যে হুমায়ুন বললেন, গত ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করার সময় দেখিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের মাটিতে তাঁর আধিপত্য কেমন এবং কেমনতর। এ বার নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই টপকাবেন। সকলের উপস্থিতিতে বেলডাঙার খাগরুপাড়া মোড়ে প্রায় ৪৯ বিঘা জমির উপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করবেন দলের নাম। কিন্তু দল ঘোষণার পর প্রথমেই জানাবেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতির নাম। কারণ? মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি নিয়ে শেষ মুহূর্তের কিছু সিদ্ধান্ত বদলেছেন কবীর। তাই সোমবার মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করছেন না। ৩৪১টি ব্লক, ১২৫টি পৌর এলাকায় কমিটি ঘোষণা করবেন। গত ৬ ডিসেম্বরের জমায়েতকে শাসকদল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়ের সূচনা বলে দাবি করেছিলেন হুমায়ুন। এ বার তৃণমূলকে হারাতে কংগ্রেস, বাম এবং আইএসএফকে আহ্বান জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বারের লড়াই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। হিসাব করে পা ফেলছি।’’

কিন্তু বিভিন্ন প্রস্তুতি সভা থেকে হুমায়ুন নির্দ্বিধায় বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত করা। অন্তত ৯০টি আসন পেয়ে সরকার গড়তে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চান। নইলে বাবরি মসজিদ তৈরির স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে। কিন্তু দল ঘোষণার দিন কেন জুম্মাবারের (শুক্রবার) বদলে সোমবার বাছলেন? হুমায়ুনের জবাব, ‘‘মা বলেছিল সোমবার ভোরে আমার জন্ম। ১০০ বছর পার করেছেন মা। তিনি জীবিত। তিনি চান, সোমবার আমি ভাল কিছু করি। মানুষের জন্য দল গড়ছি। তার আত্মপ্রকাশের দিন সোমবারের চেয়ে ভাল আর কোন বার হতে পারে?’’ সোমবারের সঙ্গে তো আবার শিবের যোগ। হুমায়ুনের মন্তব্য, ‘‘শিবঠাকুর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা নেই। তবে অনেকে আমায় একগুঁয়ে, গোঁয়ার বলেন। আমি যেটা করব বলি, সেটা করেই ছাড়ি। শুনেছি, উনিও তেমন ছিলেন।’’

ইতিমধ্যে সারা বেলডাঙা ছয়লাপ হুমায়ুনের পোস্টারে। কিন্তু কোথাও তাঁর দলের নাম নেই। প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, দলের নাম এবং প্রতীক দেখতেই কমপক্ষে চার লক্ষ লোক ভিড় করবেন। ওটা তো চমক। আর দলের নাম নিয়ে তৃণমূলের বিদ্রোহী বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘অধীর চৌধুরী আমার নেতা— এ কথা অনেক বার স্বীকার করেছি। কিন্তু যাঁরা ওঁকে ঘিরে থাকেন, তাঁদের আচরণে মর্মাহত হয়েছি।’’ কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপি হয়ে তৃণমূল ঘুরে হুমায়ুন বলছেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক জীবন চল্লিশ (বছর) ছুঁই ছুঁই। আমিও গঙ্গা-পদ্মার জল মাপতে জানি। মুর্শিদাবাদের মানুষ কংগ্রেসকে সম্পূর্ণ বর্জন করেছে। তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলার অপেক্ষায় রয়েছে। তাই নিজের দলের সঙ্গে তৃণমূল কিংবা কংগ্রেস— কোনও শব্দ রাখব না। তবে দলের নামের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজেই একাত্ম হতে পারবেন। বাংলার আমজনতার পার্টি হবে আমার দল। আমজনতার উন্নয়নের কথা ভাববে।’’

আর প্রতীক? হুমায়ুন বলে চলেন, ‘‘২০১৬ সালে নির্দল হিসাবে আমি টেবিল চিহ্নে ভোটে লড়েছিলাম। মানুষ সমর্থন করেছিলেন। আমার প্রথম রাজনৈতিক পরিচয়ের সঙ্গে টেবিল জুড়ে আছে। তাই টেবিলই আমার প্রথম পছন্দ। নির্বাচন কমিশনের কাছে ওটাই চাইব। তা না-হলে দ্বিতীয় পছন্দ জোড়া গোলাপ। সেটাও না হলে অন্য অপশনের কথা ভাবব।’’

হুমায়ুনের সভাস্থলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রায় ৫ ফুট উঁচু লোহা, অ্যালুমিনিয়ামের স্ট্যান্ডের ওপর তৈরি হয়েছে মূল মঞ্চ। রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক হ্যাঙ্গার প্যান্ডেল। মঞ্চ এবং সাউন্ড সিস্টেমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৩০ ফুট জায়গা। কয়েক কিলোমিটার দূরেই রাজ্য সড়ক। যানজটের আপডেট দিতে সভাস্থলে ওড়ানো হবে ড্রোন। বসানো হয়েছে বিশালাকার এলইডি স্ক্রিন। অন্য দিকে, গত ৬ ডিসেম্বরের যানজট থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এ বার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোমর বেঁধে নেমেছে জেলা পুলিশ। হুমায়ুন বলছেন, তাঁদের নিজস্ব ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকও হাত লাগাবেন। নদিয়ার করিমপুর, তেহট্ট, নওদা ইত্যাদি জায়গা থেকে আগত সমর্থকদের জন্য কেদারচাঁদপুর-মানিকনগর রুট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বহরমপুর বা পলাশির দিক থেকে আসা সমর্থকদের সারুলিয়া থেকে কাজী শাহ বাইপাস ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা অনুগামীরা ভাবতা মোড় দিয়ে সভাস্থলে পৌঁছোতে পারবেন। হাজার কুড়ি কর্মীর জন্য খাবারের এলাহি ব্যবস্থা থাকছে। তা ছাড়া পানীয় জলের ‘পাউচ’, বোতল থাকবে সকলের জন্য। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে। প্রাথমিক চিকিৎসার ‘ক্যাম্প’ রাখা হয়েছে মঞ্চের পাশেই।

সব দেখেশুনে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড (যাঁর সঙ্গে হুমায়ুনের সম্পর্ক ‘মধুর’) বলেন, ‘‘বাবরি মসজিদের সেন্টিমেন্ট দিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে নামছেন নামুন। বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল। রাজনৈতিক ময়দানে ওঁকে স্বাগত জানালাম। তবে ধর্মকে ব্যবহার করে লোক জড়ো করা এক, আর রাজনীতির ময়দানে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষের যোগদান আর এক বিষয়।’’ হুমায়ূন যাঁকে ‘গুরু’ বলেন, সেই অধীরের মন্তব্য, ‘‘মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু মানুষ জানেন, কারা তাঁদের পাশে। একবার প্ররোচিত হয়ে তৃণমূলকে উজাড় করে ভোট দিয়ে আফসোস করছেন। তৃণমূলের কোনও প্রোডাক্টের কাছে তাঁরা আর যাবেন না।’’

Humayun Kabir new party West Bengal Politics West Bengal Assembly Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy