‘মাওবাদী এলাকায়’ বাহিনী থাকুক কেন্দ্রকে বলল রাজ্য

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে দিল্লিতে পাঠানো চিঠিতে নবান্ন বলেছে, রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় নতুন করে মাওবাদীরা সংগঠিত হচ্ছে। তাই বাহিনী ছেড়ে দেওয়া মুশকিল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

খাতায়-কলমে গত ছ’বছরে পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী সন্ত্রাসের সংখ্যা শূন্য। মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নাম। তবু কেন্দ্রের দাবি মেনে ওই এলাকাগুলি থেকে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরাতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে দিল্লিতে পাঠানো চিঠিতে নবান্ন বলেছে, রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় নতুন করে মাওবাদীরা সংগঠিত হচ্ছে। তাই বাহিনী ছেড়ে দেওয়া মুশকিল।

Advertisement

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের একটি সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘বেলপাহাড়ির কয়েকটা অঞ্চলে কেউ কেউ ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীদের নিয়ে আসছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী কারও নাম না-করলেও গত কাল তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি মাওবাদী-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ তোলেন। যে অভিযোগ স্বাভাবিক ভাবেই উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। জঙ্গলমহলকে মাওবাদী-মুক্ত করা যেখানে অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করতেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, সেখানে পরপর মাওবাদী প্রসঙ্গ তোলা এব‌ং এই চিঠি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের বর্তমান তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে রয়েছে একমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলাই।

মাওবাদী দমনে মোদী সরকারের মূল চিন্তা ছত্তীসগঢ়। বছর শেষেই ছত্তীসগঢ়ে ভোট। তাই বিভিন্ন রাজ্যে মোতায়েন ৭ ব্যাটেলিয়ন অতিরিক্ত বাহিনীকে ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ঠিক হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড থেকে এক ব্যাটেলিয়ন করে, বিহার থেকে দুই ব্যাটেলিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিন ব্যাটেলিয়ন বাহিনী বস্তারে যাবে।

Advertisement

স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে রাজ্যকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্র লেখে— পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এলাকায় মোতায়েন থাকা সিআরপি-র ৫০, ৬৬ ও ১৬৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। একই ধাঁচের চিঠি যায় বাকি তিন রাজ্যেও। বিজেপি ও জেডিইউ শাসিত বাকি রাজ্য তা মেনে নিলেও আপত্তি জানিয়ে পাল্টা চিঠি দেয় নবান্ন।

নবান্নের চিঠিতে রাজ্যের গোয়েন্দা-রিপোর্ট উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে ফের মাওবাদী গতিবিধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। মাওবাদীরা দীর্ঘদিন বাদে সেখানে একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। বাহিনী সরালে বিভিন্ন এলাকায় তাদের উপদ্রব বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গের কোথাও কোথাও মাওবাদীরা ফের গতিবিধি বাড়িয়েছে বলে সম্প্রতি নিজস্ব রিপোর্টে স্বীকার করেছে সিআরপি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, কোনও রাজ্য বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দিতে পারে না। প্রতিটি রাজ্যের উচিত, আধাসেনার ধাঁচে বিকল্প পুলিশবাহিনী গড়ে তোলা। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য বিকল্প বাহিনী গড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে আশু সমাধান হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ যাতে তিন ব্যাটেলিয়নের জায়গায় অন্তত দু’ব্যাটেলিয়ন বাহিনী ছেড়ে দেয়, তার জন্য নতুন করে চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন