আয়ুষ্মান প্রকল্পে ফিরে আসুন, রাজ্য প্রসাসনকে অনুরোধ মোদী সরকারের

নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেও ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে ফিরে আসার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে অনুরোধ জানাল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪১
Share:

কেন্দ্রের চিঠির লোগো(ইনসেটে) নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মমতার। ফাইল চিত্র।

নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেও ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে ফিরে আসার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকে অনুরোধ জানাল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। প্রকল্পের রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি (এনএইচএ)-র সিইও ইন্দু ভূষণ গত শুক্রবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিন্‌হাকে চিঠি লিখে বলেছেন, ‘রাজ্যের ১ কোটি ১০ লক্ষ গরিব মানুষের চিকিৎসা বিমার কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন।’ ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে প্রয়োজনে তিনি নিজেই কলকাতা এসে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। বলেছেন, চাইলে স্বাস্থ্যসচিবও দিল্লি গিয়ে কথা বলতে পারেন।

Advertisement

তবে রাজ্য যে অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, তাকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইন্দু ভূষণ। এ দিন দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মোদীও বলেছেন, ‘‘আয়ুষ্মান প্রকল্পের নামের আগে কি নরেন্দ্র মোদীর নাম জুড়ে আছে? নিজের থেকে দল, দলের থেকে দেশ বড়। এটাই আমাদের সংস্কার।’’

স্বাস্থ্য ভবন অবশ্য নীরব। এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যা হবে মুখ্যমন্ত্রীই ঠিক করবেন।’’

Advertisement

‘আয়ুষ্মান ভারত’ থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে চিঠি পাঠান স্বাস্থ্যসচিব। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দিয়েছে দিল্লি। ইন্দু ভূষণ লিখেছেন, ‘আয়ুষ্মান ভারত সম্পর্কিত চিঠিটি কোনও ‘এনটাইটেলমেন্ট লেটার’ বা উপভোক্তা কার্ড নয়। এটা প্রকল্পটির প্রচারের একটি মাধ্যম মাত্র। প্রকল্পটি নিয়ে যে ব্যাপক প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, এটি তারই অন্যতম।’ তাঁর দাবি, এই চিঠি রাজ্যের সঙ্গে হওয়া মউ এর পরিপন্থী নয়। বরং প্রচারের জন্য সারা দেশ জুড়ে যে পদক্ষেপ করা হবে, তা গত সেপ্টেম্বর মাসে সব রাজ্যকেই জানানো হয়েছিল।

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি।

ইন্দু ভূষণ আরও জানিয়েছেন, ‘আয়ুষ্মান ভারত-স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের যে উপভোক্তা কার্ড তৈরি হবে, সেটিই হবে চিকিৎসা বিমার একমাত্র পরিষেবা প্রদানকারী কার্ড। তাতে দু’টি প্রকল্পেরই নাম ও লোগো থাকবে।

এর পরেই রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ তুলেছেন এনএইচএ কর্তা বলেছেন, ‘মউ-এর ৬(এন) ধারা অনুযায়ী এই প্রকল্পের সব কিছুতেই আয়ুষ্মান ভারত-স্বাস্থ্যসাথী উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রকল্পটির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যও আয়ুষ্মান ভারত কথাটি লেখা জরুরি। কেন্দ্র যে প্রিমিয়ামের ৬০% টাকা দিচ্ছে, তা-ও উল্লেখ থাকা দরকার। কিন্তু এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে রাজ্য সরকার সে কথা উল্লেখ পর্যন্ত করেনি। এমনকি বলা হয়েছে, বিমার পুরো টাকা রাজ্যই মেটাচ্ছে। এটাও চুক্তি খেলাপির কাজ।’

রাজ্যকে কটাক্ষ করে দিল্লি আরও লিখেছে, এর আগেও রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা নামে একই ধরনের প্রকল্প ২০০৮ থেকে চলেছে। তাতে যে কার্ড বিলি হত, তা ভারত সরকারের সম্পত্তি ছিল। সেই প্রকল্পেও রাজ্য সরকার প্রিমিয়ামের ৪০% টাকা দিয়েছে। তা হলে হঠাৎ আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে এত আপত্তি কেন!

এর পরেই ইন্দু ভূষণ লিখেছেন, ‘ইতিমধ্যেই ১৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্যের ৫০ লক্ষ বা ২৫% পরিবার সুবিধা পাচ্ছিল। আয়ুষ্মান ভারত আসার পরে ১.১ কোটি বা ৫৫% পরিবার ৫ লাখ টাকার বিমার সুবিধা পাবে। এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাজ্য কি গরিব মানুষকে বিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে চায়?’ রাজ্য কিন্তু এখনই এ নিয়ে এগোতে নারাজ। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৪০ লাখ পরিবারে মোদীর ছবি সম্বলিত চিঠি চলে গিয়েছে। ভোটের আগে ঘরে ঘরে মোদীর চিঠি পাঠিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন