প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক নিয়োগে রাজ্যের আর্জি খারিজ

গোটা দেশে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় গত বছরই প্রশিক্ষণকে বাধ্যতামূলক করেছে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন’ বা এনসিটিই। কিন্তু শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার!

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত ও সুপ্রিয় তরফদার

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ২০:৫০
Share:

গোটা দেশে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় গত বছরই প্রশিক্ষণকে বাধ্যতামূলক করেছে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন’ বা এনসিটিই। কিন্তু শূন্যপদ পূরণ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার! তাই প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের জন্য ফের দিল্লির দ্বারস্থ হল রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। কিন্তু সেই আবেদনকে খারিজ করল কেন্দ্র। দ্রুত রাজ্যের আর্জি খারিজ করে চিঠি পাঠাতে চলেছে কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

Advertisement

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে গিয়ে ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বহু শূন্যপদ পূরণ করাই সম্ভব হয়নি! কারণ ওই স্তরে বিজ্ঞান বিষয়ের এমন প্রার্থী যাঁদের বিএড প্রশিক্ষণ রয়েছে, এরকম সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। যে কারণে শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি স্কুল শিক্ষা দফতরের সচিব দিল্লিতে চিঠি লিখে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। এবং বি এড প্রশিক্ষণ ছাড়াই রাজ্য যেন শিক্ষক নিয়োগের করতে পারে তার অনুমোদনের জন্যে আবেদন করেছে। শূন্যপদ পূরণ করতে না পারায় আখেরে যে ছাত্রদেরই ক্ষতি হচ্ছে তা মানছে স্কুল শিক্ষা দফতর। এমনকি এই টালবাহানায় প্রায় তিন বছর বন্ধ রয়েছে শিক্ষক নিয়েগের পরীক্ষাও!

Advertisement

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে শেষ বারের মতো নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা আরএলএসটি হয়েছিল। সে সময় এনসিটিই জানিয়েছিল প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের আগে নিয়োগ করতে হবে। তখনই দেখা গিয়েছিল শূন্যপদ পূর্ণ করা যায়নি। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই বছর পরীক্ষা নিয়েই দেখা গিয়েছিল শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের পক্ষে গিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে গিয়েই আদালতে মামলা করেছিলেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। যে কারণে পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছিল।’’ কিন্তু তার মধ্যেই ২০১৪ সালে এনসিটিই একেবারে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার নয়, শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদেরই নিয়োগ করতে পারবে সরকার। তার ফলেই ফের মাথায় হাত পড়েছে রাজ্য সরকারের।

তবে পরীক্ষা না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গিয়েছে বলে মেনে নেন ওই কর্তা। ওই কর্তার ব্যাখ্যা, পরের তিন বছরে শূন্যপদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসতে চলেছে। পাশাপাশি, বেকার সমস্যাও বাড়ছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রাজ্যের বহু ছাত্রও বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এনসিটিই থেকে কোনও উত্তর না পাওয়া গেলে পুরো বিষয়টি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

অবশ্য দিল্লির মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে কোনও ভাবেই প্রশিক্ষণ বিষয়ে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। এখন কোনও মতেই তাতে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়।’’ তবে মন্ত্রক সূত্রের খবর, এর আগেও প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু মানবসম্পদ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করায় প্রশিক্ষণে ছাড় দিয়েছিল মন্ত্রক। ফলে ভবিষ্যতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও যে অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে না, এমন নিশ্চিত নয় মন্ত্রকও। তবে আপাতত রাজ্যের আর্জি খারিজ করেই জবাব পাঠাতে চলেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

তা হলে কি পরীক্ষাও অথৈ জলে?

এ বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরীক্ষা নেওয়াই যায়। কিন্তু স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’’ দফতরের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তবে এ ক্ষেত্রে ফের একটি অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করছে দফতর।

এক কর্তা জানান, বর্তমানে বিএড দু’বছরের কোর্স। বিজ্ঞান বিভাগের কোনও প্রার্থীর বিএড প্রশিক্ষণ রয়েছে এ রকম সংখ্যা কম। ২০১৪ সালে এনসিটিই বি এড বাধ্যতামূলক করার পরেও কোনও পড়ুয়া বিএড করতে গেলে দু’বছর, অর্থাৎ ২০১৭ পর্যন্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০১৬-তে পরীক্ষা নিয়েও শূন্যপদ পূরণ করা যাবে না বলেই আশঙ্কা ওই কর্তার। তবে এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায় বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি বিএড কলেজের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে গেলে বহু অর্থ খরচ হয়। যা সাধারণ পরিবারের ক্ষেত্রে করা মুশকিল। এই সমস্যা মেটাতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’ কিন্তু পরিস্থিতি যে ভাবে জট পাকিয়ে গিয়েছে তা আদৌ কবে খুলবে তা নিয়ে সন্দিহান সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন