VHP

জন্মাষ্টমী এবং এনআরসি ঘিরে রাজ্যে অশান্তির শঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের

প্রতিষ্ঠা দিবসকে সামনে রেখে, ভিএইচপি এ বার এক সপ্তাহ ব্যাপী উৎসবের পরিকল্পনা করেছে মূলত দু’টি বিষয়কে ফোকাস করে। জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানকে ব্লক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে এই উৎসবে যত বেশি সংখ্যক মহিলাকে সামিল করা।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ১৪:৫৮
Share:

এ রাজ্যে এনআসি-র দাবিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচার। —নিজস্ব চিত্র

রাম নবমীর পর এ বার জন্মাষ্টমী। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ব্লক স্তর পর্যন্ত, এক সপ্তাহ জুড়ে জন্মাষ্টমী পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। সঙ্গে এ সপ্তাহ থেকেই— অসমের ধাঁচে এ রাজ্যে নাগরিক পঞ্জির দাবি তুলেও প্রচারে নামছে এই সংগঠন। পাল্টা প্রচারে সক্রিয় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এই আবহে অশান্তির সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

Advertisement

এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শাখা এসআইবি (সাবসিডিয়ারি ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ) থেকে দিল্লির আইবি (ইনটেলিজেন্স ব্যুরো)-তে সম্প্রতি যে রিপোর্ট গিয়েছে, তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে— জন্মাষ্টমী ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজ্যের পরিস্থিতি। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তাদের যুব সংগঠন বজরং দল, রাজ্যে প্রায় ২ হাজার জায়গায় এ বছর জন্মাষ্টমী পালনের পরিকল্পনা নিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, তাদের সাংগঠনিক জেলাগুলিকে নির্দিষ্ট সংখ্যক জায়গায় এই উৎসব পালনের লক্ষমাত্রাও দেওয়া হয়েছে। জন্মাষ্টমীর দিনই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। এ বছর জন্মাষ্টমী পড়েছে ২ সেপ্টেম্বর।

প্রতিষ্ঠা দিবসকে সামনে রেখে, ভিএইচপি এ বার এক সপ্তাহ ব্যাপী উৎসবের পরিকল্পনা করেছে মূলত দু’টি বিষয়কে ফোকাস করে। জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানকে ব্লক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে এই উৎসবে যত বেশি সংখ্যক মহিলাকে সামিল করা।

Advertisement

আরও পড়ুন: কৈলাসের কথার পর বঙ্গে সতর্ক অমিত, ‘অপেক্ষাকৃত কম উগ্র’ লাইনের অনুরোধ নেতাদের

গোয়েন্দারা তাঁদের রিপোর্টে জানিয়েছেন, এ বছর একই ভাবে রামনবমী উৎযাপন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তা ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের পরিস্থিতিও তৈরি হয়। গোয়েন্দাদের মতে, এ বার আশঙ্কা বেশি কারণ, জন্মাষ্টমীর সঙ্গে যোগ হয়েছে নাগরিক পঞ্জির দাবিতে প্রচার। সোমবার থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অসমের মতো নাগরিক পঞ্জীকরণের দাবি তুলে প্রচারে নেমেছে এই সংগঠন। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নাগরিক পঞ্জির দাবিতে মিছিল-পথসভা করছে। বিলি করা হচ্ছে লিফলেট, যার শিরোনাম ‘এনআরসি— অসমে হলে, পশ্চিমবঙ্গে নয় কেন?’ শাসক দল তৃণমূলকে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে এই লিফলেটে।

রামপুরহাটে বিজেপির রাম নবমীতে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি

গোয়েন্দাদের দাবি, এই জোড়া আক্রমণের মুখে চুপ করে বসে নেই শাসক দলও। তারাও নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নেমেছে। রবিবারই রাজ্য জুড়ে কালাদিবস পালনের সময় তৃণমূল ব্লকে ব্লকে নাগরিক পঞ্জীকরণের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ব্লক বা গ্রাম ভিত্তিক প্রচারের সময়, দু’পক্ষই এমন কিছু আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যাবহার করছেন, যা কার্যত উস্কানির সামিল। আর সেই উস্কানি থেকে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের গণ্ডগোল বা অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনই আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বীরভূমের মত জায়গা থেকে এই প্রচার শুরু করেছে, যেখানে তাদের সংগঠন শক্তিশালী। কিন্তু তাদের প্রচারের মূল জোর থাকবে, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে।

আরও পডু়ন: ইন্দিরা গাঁধীর চোখ-কান ছিলেন তিনিই, কোন গোপন তথ্য জানতেন আর কে ধওয়ন?

গোয়েন্দাদের দাবি, দুই ২৪ পরগনাতে ইতিমধ্যেই গ্রাম স্তরে কিছু জায়গায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় স্তরের কর্মীরা আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলছেন, যা ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং-এর কিছু এলাকা এবং উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত এবং বসিরহাট এলাকার কিছু গ্রামে। এ বিষয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র সৌরীশ মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তাঁর দাবি, “আমরা কোনও ধরণের অশান্তিতে জড়াতে চাই না। কেউ অশান্তি ছড়িয়ে আমাদের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করলে প্রতিরোধ করব।” সৌরীশ বলেন “আমরা জন্মাষ্টমী এ বার খুব বড় করে পালন করব। ১ হাজার জায়গায় শোভাযাত্রা বেরোবে এবং আরও ১ হাজার জায়গায় জন্মাষ্টমীর পুজো হবে।” পাশাপাশি নাগরিক পঞ্জির দাবিতেও যে তারা বড়সড় প্রচারে যাচ্ছেন তাও জানিয়েছেন সৌরীশ।

উস্কানি বা অশান্তির বিষয়ে একই ভাবে দায় এড়িয়েছেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শৌকত মোল্লা। তাঁর এলাকাতেও উস্কানির অভিযোগ উঠেছে। শৌকত আনন্দবাজারকে বলেন, “আমি বা আমার কর্মীরা কখনই উস্তানিমূলক কোনও মন্তব্য করিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন