চট নিয়ে প্রস্তাব মমতার, প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন মোদী

চট শিল্পের চটক ফেরানোর রাস্তা খুঁজতে জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। সরকারি সূত্রের খবর, এদের থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মোদী সরকার চট শিল্পের পুনরুজ্জীবনে নতুন নীতি ঘোষণা করতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫২
Share:

চট শিল্পের চটক ফেরানোর রাস্তা খুঁজতে জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, এদের থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মোদী সরকার চট শিল্পের পুনরুজ্জীবনে নতুন নীতি ঘোষণা করতে পারে। প্রতিনিধি দলে বস্ত্র, কৃষি ও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের আমলারা থাকবেন।

চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের চট শিল্পের সমস্যার কথা তুলেছিলেন। সেই সময়ে চটকলগুলির আধুনিকীকরণের জন্য নতুন করে ‘জুট টেকনোলজি মিশন’ তৈরির পাশাপাশি একগুচ্ছ দাবি জানান মমতা। এর পর তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। চট শিল্পকে চাঙ্গা করার পদক্ষেপ করতে মোদীর সামনে সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ও অর্থনীতিতে চট শিল্পের গুরুত্ব বুঝেই সাহায্যের হাত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী।

Advertisement

কী চাইছেন মমতা ও তাঁর দলের সাংসদরা?

তাঁদের যুক্তি, রাজ্যের চটকলগুলির আধুনিকীকরণে নতুন করে ‘জুট টেকনোলজি মিশন’ শুরু করা হোক। চট কলে নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বসাতে উৎসাহ ভাতা দেওয়ার বন্দোবস্ত হোক। এখন চাল-গমের মতো খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ এবং চিনির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ চটের বস্তা ব্যবহারের বিধান রয়েছে। চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মমতা মোদীর কাছে দাবি করেছিলেন, ১০০ ভাগ ক্ষেত্রেই চটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হোক। চটের বস্তা কেনার প্রক্রিয়ারও সরলীকরণ হোক। পাশাপাশি, চট আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ চালু হোক। আর দীনেশ ত্রিবেদী প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বাংলাদেশ চট রফতানির ক্ষেত্রে ৭.৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। এর ফলে এ দেশের চটকল মালিকরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। তার সঙ্গে সিরিয়া ও তাইল্যান্ডে অশান্তির জেরে গত দু’বছরে চট রফতানি যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে। সে জন্য চট রফতানিকারীদের উৎসাহভাতা চালু করা হোক। দেশের কিছু চটকল সংস্থা সস্তায় নেপাল বা বাংলাদেশ থেকে চটের বস্তা আমদানি করে নিজেদের নাম দিয়ে সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করছেন। তাই বাংলাদেশ থেকে চট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক চাপানো হোক।

কিছু দিন আগেই পাট চাষের এলাকা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ উৎসাহ ভাতা ঘোষণা করেছেন। মোদীকে দীনেশ জানিয়েছেন, শুধু এতে হবে না। চাষিরা যাতে ভালো মানের পাট চাষের দিকে ঝোঁকেন, সে জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নীতি ঢেলে সাজা হোক। কৃষি-পরিকাঠামোতেও বিনিয়োগ করতে হবে। কিছু দিন আগে নবান্নেও পাট চাষের সমস্যা নিয়ে বৈঠকে সমবায় প্রথা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হল, মধ্যস্বত্বভোগী মজুতদারদের রমরমা বন্ধ করতে সমবায় সরাসরি চাষিদের থেকে পাট কিনে চটকল মালিকদের বিক্রি করুক। এর ফলে বেআইনি মজুতদারি বন্ধ হবে। প্রধানমন্ত্রীকে দীনেশ জানিয়েছেন, পাট চাষিদের পাশাপাশি চটকল শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান জরুরি। আর চটকল মালিকরা যাতে

সরকারি বরাতের বিষয়ে অনিশ্চয়তায় না ভোগেন, সে জন্য স্থায়ী নীতি তৈরিরও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দীনেশ যুক্তি দিয়েছেন, প্লাস্টিকের বদলে চটের বস্তার ব্যবহার প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর লক্ষ্যের সঙ্গেও মানানসই।

চট নিয়ে তৃণমূলের মাথা ব্যথার পিছনে রাজনৈতিক কারণও যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের ৬৪টি চটকলে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। পাটের ব্যবসার সঙ্গেও বহু মানুষ যুক্ত। দীনেশ ত্রিবেদীর নিজের এলাকা ব্যারাকপুরে বেশ কিছু চটকল রয়েছে। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। ব্যারাকপুর অঞ্চলে চটকলের সমস্যা হলে এলাকার তৃণমূল বিধায়করাও সমস্যায় পড়বেন। শুধু ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নয়, তৃণমূলের ১৯৩ জন বিধায়কের মধ্যে ১৬০ জনই পাট চাষ বা চটকল এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধি। দীনেশ মোদীকে জানিয়েছেন, চট শিল্পের সমস্যার সমাধান না হলে এর ভবিষ্যতও মুম্বইয়ের বস্ত্র শিল্পের মতো হবে। বহু মানুষ রোজগার হারাবেন। মোদী আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে এক সারিতে নিয়ে আসতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন