kali Puja 2022

চন্দনের সুবাসহীন মামা-ভাগিনার পুজো

বাগদার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা সিবিআই কর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের একটি ভিডিয়ো তাঁকে প্রচারের আলোয় এনে ফেলে। চন্দনকে পরে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা তলব করে হাই কোর্ট।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বাগদা  শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ১০:০০
Share:

কালীপুজো। ফাইল চিত্র।

গত কয়েক বছর কালীপুজোর রাতটা থাকত অন্য রকম। বিশাল প্যান্ডেল বাঁধা হত মাঠে। চারপাশের এলাকা মুড়ে ফেলা হত আলোর মেলায়। হাজার মানুষের ভিড়। সন্ধে নামতেই কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা, সরকারি আধিকারিকদের গাড়ির লাইন পড়ত। পুজোর জাঁকজমক ছিল দেখার মতো।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার বাগদার মামাভাগিনা গ্রামে এ পুজোর মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন চন্দন মণ্ডল। যিনি পরবর্তী সময়ে শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতিতে ‘রঞ্জন সৎ’ নামে আলোচনার মুখ হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘ দিন এলাকায় দেখা যায়নি তাঁকে। অভিযোগ ওঠে, টাকা নিয়ে বহু লোককে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন চন্দন।

বাগদার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা সিবিআই কর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের একটি ভিডিয়ো তাঁকে প্রচারের আলোয় এনে ফেলে। চন্দনকে পরে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা তলব করে হাই কোর্ট। জেরা করে সিবিআই। ইডি ও সিবিআই চন্দনের বাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছে ইতিমধ্যে। মামাভাগিনা গ্রামের এই পুজো হত ‘শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দের’ নামে। তবে গ্রামের মানুষ জানতেন, এ হল ‘চন্দনের পুজো।’ এলাকায় মেলামেশা বিশেষ না করলেও ঘটা করে কালীপুজো করতেন এলাকার একটি স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক চন্দন। বিচিত্রা অনুষ্ঠান। বহু লোককে বস্ত্র দানকরা হত।

Advertisement

গ্রামের লোকে জানালেন, পুজোয় এমন অনেকের আর্থিক অনুদান থাকত, যাঁরা কোনও না কোনও সময়ে চন্দনকে টাকা দিয়ে স্কুলের চাকরি পেয়েছেন। ২০০৮ সালে চাকরি পেয়েছিলেন রঞ্জন। স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জানালেন, তারপর থেকে অভাবের সংসারে হাল ফেরে তাঁর। নিজে গৃহশিক্ষকতা করে এক সময়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন। পরে তিনিই টাকা নিয়ে লোককে স্কুলে চাকরি করে দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। ২০১২ সালের পর থেকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে ‘হাতযশ’ আরও বাড়ে। পাড়া-পড়শিদের কেউ কেউ জানালেন, রঞ্জনই তাঁদের জানিয়েছিলেন, শহরে ‘উপরমহলে’ তাঁর অনেকের সঙ্গে ওঠাবসা।গতবার করোনা-আবহে পুজোর জাঁক কিছুটা কমেছিল।

এ বার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল মাঠে পুঁচকে একখানা মণ্ডপ। গ্রামের কিছু অল্পবয়সি যুবক নমো নমো করে সেখানে পুজোর আয়োজন করেছেন। পুজো পরিচালনায় কোনও সংগঠনের নাম নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘চন্দনের পুজো যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, তা এখন আর গ্রামের লোকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এত টাকার জোগান কোথা থেকে আসবে!’’ সব মিলিয়ে এবার চন্দনের সুবাসবর্জিতই থেকে গেল মামাভাগিনার কালীপুজো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন