West Bengal Development

ফরাসি ঐতিহ্যে পর্যটনের দিশা চন্দননগরে

হেরিটেজের স্বীকৃতি মিলেছে ২০১৭ সালে। এ বার ঐতিহ্যের ফলক বসল চন্দননগরে ফরাসি আমলের তিন স্থাপত্যের গায়ে। সেই সময়ের স্থাপত্যের পুনঃসংস্থাপন এবং সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হল।

Advertisement

প্রকাশ পাল 

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৩
Share:

ঐতিহ্য: ১) চন্দননগর কলেজ ২) আলোর সাজ সেক্রেড হার্ট গির্জার ৩) ভারতে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেক‌্জ়ঁাদ্র‌্ জ়িগ্‌লে, কলকাতায় নিযুক্ত ফরাসি কনসাল জেনারেল ভির্জ়িনি কর্ৎভাল, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন-সহ আরও অনেকে। নিজস্ব চিত্র

হেরিটেজের স্বীকৃতি মিলেছে ২০১৭ সালে। এ বার ঐতিহ্যের ফলক বসল চন্দননগরে ফরাসি আমলের তিন স্থাপত্যের গায়ে। সেই সময়ের স্থাপত্যের পুনঃসংস্থাপন এবং সংরক্ষণ নিয়েও আলোচনা হল।

Advertisement

বুধবার গঙ্গাপাড়ের এই শহরে এসেছিলেন ভারতে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেক‌্জ়ঁাদ্র‌্ জ়িগ্‌লে। সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত ওই দেশের কনসাল জেনারেল ভির্জ়িনি কর্ৎভাল। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন এবং হুগলির জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। তাঁরা ফরাসি আমলের চারটি স্থাপত্য ঘুরে দেখেন। এর মধ্যে রেজিস্ট্রি বিল্ডিং, চন্দননগর কলেজ এবং সেক্রেড হার্ট গির্জায় হেরিটেজ ঘোষণার ফলক উন্মোচন করেন‌ জ়িগ্‌লে।

ফ্রেঞ্চ মিউজিয়ামে একটি ছোট অনুষ্ঠানে জ়িগ্‌লে বলেন, ‘‘ওই ভবনগুলি পুনঃসংস্থাপনের কাজ হলে শুধু যে ইতিহাসকে ফিরে দেখা যাবে তা-ই নয়, পর্যটনের ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে। আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। দুই দেশের সম্পর্কও দৃঢ় হবে।’’ শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘ফরাসি সরকার এগিয়ে এলে এই সমস্ত স্থাপত্য পুনঃসংস্থাপন এবং সংরক্ষণের কাজ অনেক সহজ হবে।’’

Advertisement

সপ্তদশ শতকে ফরাসিরা চন্দননগরে বাণিজ্য করতে এসেছিলেন। গড়ে উঠেছিল উপনিবেশ। অনেকেই মনে করেন, আধুনিক চন্দননগরের গোড়াপত্তন হয়েছিল ফরাসিদের হাত ধরে। সেই সময়ে বেশ কিছু স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল এই শহরে। হেরিটেজ কমিশনের তরফে ২০১৭ সালে ফরাসি আমলের আটটি স্থাপত্যকে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’-এর তকমা দেওয়া হয়। কমিশন জানায়, এগুলি হল— রেজিস্ট্রি ভবন, সেক্রেড হার্ট গির্জা, চন্দননগর কলেজ, কান‌াইলাল বিদ্যামন্দির (ইংরেজি বিভাগ), কানাই‌লাল বিদ্যামন্দির (ফ্রেঞ্চ বিভাগ), লিবার্টি গেট এবং হরিহর শেঠের বাড়ি।

দোতলা রেজিস্ট্রি ভবনে সেই আমলে নথিপত্র লিপিবদ্ধ করা এবং সংরক্ষণের কাজ হতো। কিন্তু কালের নিয়মে সেটি জীর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে পরিত্যক্ত ভবনটি গঙ্গার ধারে স্ট্র্যান্ডের উল্টো দিকে পোড়ো বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের গা বেয়ে গজিয়েছে বট-অশ্বত্থের সারি। এখানে ফলক উন্মোচনের পরে অতিথিরা কলেজ এবং গির্জায় যান। গির্জায় রজনীগন্ধার মালা পরিয়ে দুই বিদেশি দূতকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। কয়েক মাস আগে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়েও চন্দননগরে ঘুরে গিয়েছিলেন কর্ৎভাল। এ দিন ফ্রেঞ্চ মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে স্ট্র্যান্ড ধরে হেঁটেই বিভিন্ন ভবনে যান অতিথিরা। ফ্রেঞ্চ মিউজিয়ামে নিজস্বী তুলতেও দেখা যায় আপ্লুত জ়িগ্‌লেকে।

হুগলিতে গঙ্গাপাড়ের আর এক জনপদ শ্রীরামপুরে এক সময়ে ডেনমার্কের উপনিবেশ ছিল। বছর কয়েক ধরে সে দেশের জাতীয় মিউজিয়ামের সঙ্গে এ রাজ্যের হেরিটেজ কমিশন এবং প্রশাসনের মিলিত উদ্যোগে ওই শহরে সেই সময়ের বেশ কিছু স্থাপত্য পুনঃসংস্থাপনের কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থাপত্যকে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শুভাপ্রসন্ন জানান, চন্দননগরের ক্ষেত্রেও দু’পক্ষের মধ্যে ‘মৌ’ স্বাক্ষর করে এগোতে হবে। সেই চেষ্টাই করা হবে। ‘চন্দননগর হেরিটেজ’ সংস্থার সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী মনে করেন, চন্দননগর-সহ আশপাশের শহরের পুরনো স্থাপত্য আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া গেলে বহির্বিশ্বের মানুষ পর্যটনের

টানে আসবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন