Debanjan Deb

ই-মেলে ধোঁকা দেবাঞ্জনের!

দেবাঞ্জনের মাদুরদহের বাড়িতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চালায় পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১ ০৬:৫৭
Share:

ফাইল চিত্র।

তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে কসবায় করোনার ভুয়ো প্রতিষেধক শিবির কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের জালিয়াতির নিত্যনতুন কাহিনি। ভুয়ো আইএএস অফিসার সেজে আট জনের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে উঠেছে ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগও।

Advertisement

পুলিশ জানায়, নিজের অফিসের কর্মী বা অন্যদের যাতে কোনও রকম সন্দেহ না-হয়, সেই জন্য নিজের একটি ই-মেল আইডি এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ ফিনকর্প অনুরূপ মেসার্স’ নামে একটি সংস্থা খুলেছিল দেবাঞ্জন। পুলিশের দাবি, ওই সংস্থা থেকেই তার অফিসের কর্মীদের অ্যাকাউন্টে বেতনের টাকা যেত। সে যে আদতে সরকারি আধিকারিক নয়, তা আড়াল করতেই ওই অভিযুক্ত এই ধরনের নাম দিয়ে সংস্থা খুলেছিল বলে তদন্তকারীদের অভিমত। একই ভাবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে পুরসভার ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে কেএমসিজিওভি.ওআরজি (kmcgov.org) নামে একটি ই-মেল খুলেছিল দেবাঞ্জন। সাধারণ সরকারি ওয়েবসাইটের বা সরকারি আধিকারিকদের ই-মেলের ক্ষেত্রে এই ধরনের লিঙ্ক ব্যবহার করা হয়।

দেবাঞ্জনের মাদুরদহের বাড়িতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তল্লাশি চালায় পুলিশ। তল্লাশির সময় তারা দেবাঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে আসে। রাত ৯টা নাগাদ দেবাঞ্জনের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় পুলিশকে বেশ কয়েকটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরোতে দেখা যায়। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ দেবাঞ্জনের বাড়ির কম্পিউটার পরীক্ষা করে দেখেছে। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুরসভার বেশ কিছু নথি ও স্ট্যাম্প পেপার উদ্ধার করেছে তারা। বাড়ির চার দিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ দেখবে, ওই বাড়িতে কাদের আনাগোনা ছিল। তল্লাশির পরে পুলিশ দেবাঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে লালবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ ছাড়া দেবাঞ্জন কসবার যে-এলাকায় ভুয়ো প্রতিষেধক শিবিরের আয়োজন করেছিল, সেই এলাকার ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষকে ফেসবুকে গালিগালাজ করার অভিযোগে পুলিশ রবিবার এক

Advertisement

যুবককে গ্রেফতার করেছে। এর সঙ্গে ওই শিবিরের কোনও যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানান, দেবাঞ্জনের অফিসের কিছু কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বাকিদেরও। ওই কর্মীদের প্রশ্ন করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অফিসকর্মীদেরও প্রতিষেধক দিয়েছিল দেবাঞ্জন। এবং তা ভুয়ো বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দেবাঞ্জন পুলিশকে জানিয়েছে, ওই প্রতিষেধক পেতে সে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটকে মেল করেছিল। কিন্তু সেখান থেকে কোনও সাড়া না-পেয়ে ভুয়ো প্রতিষেধক দেওয়ার রাস্তা বেছে নেয় বলে কবুল করেছে ওই অভিযুক্ত।

লালবাজার সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ ফিনকর্প সংস্থার নামে তো বটেই, তা ছাড়াও এ-পর্যন্ত দেবাঞ্জনের মোট আটটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। ওই সব অ্যাকাউন্টে ঠিক কত টাকার লেনদেন হয়েছে, তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখাকে।

সে পুরসভার কর্তা বলে দাবি করেছে দেবাঞ্জন। গোয়েন্দারা কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে শুধু পুরসভা নয়, পূর্ত ও তথ্য-সংস্কৃতি দফতরেরও প্রচুর জাল স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে মরিয়া ছিল ওই অভিযুক্ত। কেউ তার কাছে কোনও সাহায্য চাইতে এলে তৎক্ষণাৎ সেই সাহায্যপ্রার্থীর সামনেই তার কথামতো সুপারিশপত্র লিখে দিত দেবাঞ্জন। সবার কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে নিজের সুপারিশের উত্তরে জাল স্ট্যাম্প মেরে নিজেই চিঠি লিখত! এই ভাবেই নিজের গাড়ির চালককে সরকারি নিয়োগপত্র দিয়েছিল সে। পুলিশের কাছে সেই গাড়িচালকের দাবি, তাঁকে নবান্ন থেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। আদতে সেটা ছিল দেবাঞ্জনের কীর্তি। কসবার অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের এই ধরনের বহু ভুয়ো সুপারিশপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন