Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ধর্নামঞ্চে ফোন মমতার, কিছুটা ‘আশ্বস্ত’ প্রার্থীরা

সশরীরে এসেও এলেন না তিনি। গাড়ি থেকে হাত নেড়ে অদূরের রাস্তা দিয়ে চলে গেলেন। পরে এল তাঁর ফোন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২২ ০৬:১২
Share:

ফাইল ছবি

সশরীরে এসেও এলেন না তিনি। গাড়ি থেকে হাত নেড়ে অদূরের রাস্তা দিয়ে চলে গেলেন। পরে এল তাঁর ফোন। এল ‘আশ্বাস’-ও। যে-দাবিতে স্কুলশিক্ষকের পদপ্রার্থীদের দীর্ঘ ধর্না-আন্দোলন, সেই নিয়োগের বিষয়ে মঙ্গলবার তাঁদের সঙ্গে ফোনেই কিছু ক্ষণ কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি তাঁদের আশ্বাস দেন বলে প্রার্থীদের দাবি। সেই ফোনালাপের কিছু পরেই বিকাশ ভবনের দুই প্রতিনিধি ওই ধর্নামঞ্চে হাজির হয়ে আলোচনা করেন।

Advertisement

এ দিন ইদের নমাজে যোগ দিতে রেড রোডে যান মুখ্যমন্ত্রী। ফেরার সময় গাড়ি থেকে কাছেই অনশনরত এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের দিকে হাত নাড়েন। প্রার্থীরা চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ধর্মতলায় তাঁদের ধর্নামঞ্চে আসুন। মুখোমুখি কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করুন। তা হয়নি। এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধা-তালিকাভুক্ত নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থী এবং কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার প্রার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ডিসি (সাউথ) ধর্নামঞ্চের কাছে ছিলেন। তখনই তাঁকে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রী এক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলতে চান। কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীদের এক জন এবং নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের এক জন প্রতিনিধির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয় ফোনে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের নিয়োগের বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। অনশনও তুলে নিতে বলেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করলেও বিক্ষোভকারীরা জানান, দাবি পূরণের আগে পর্যন্ত তাঁরা ধর্না তুলছেন না। শহিদ মিনারের কাছে ২৬ দিন ধরে অবস্থান চালাচ্ছেন কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার প্রার্থীরা। এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার সভাপতি রাজু দাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিকাশ ভবনের দুই কর্তা আলোচনা করতে ধর্নামঞ্চে আসবেন।”

Advertisement

কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা বিভাগের কর্মপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ফোনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বিকাশ ভবনের দুই কর্তা এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজু বলেন, “ওই দুই প্রতিনিধিকে দাবির কথা জানিয়েছি। নিয়োগের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি কোথায়, তা-ও বলেছি। তাঁরা আমাদের তিন জনকে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনে দেখা করতে বলেছেন। জানিয়েছেন, সরকার চায়, এই ধর্না উঠে যাক।” তবে রাজুরা জানান, তাঁরা এখনই উঠছেন না। কারণ, আগেও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। এ বার ‘আশ্বাস’ পেলেও তার রূপায়ণের আগে তাঁরা আন্দোলন ছাড়বেন না।

নবম-দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না চলছে ধর্মতলায় গান্ধী-মূর্তির নীচে। মঙ্গলবার ছিল তাঁদের ধর্নার ১৯৮তম দিন। পলাশ মণ্ডল নামে এক প্রার্থী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে আমাদের দিকে হাত নাড়েন। তার কিছু পরেই ডিসি (সাউথ) এসে জানান, মুখ্যমন্ত্রী ফোনে আছেন। কথা বলতে চান। আমাদের মধ্যে ইলিয়াস বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।” ইলিয়াস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমাদের বিষয় নিয়ে হাই কোর্টে কেস রয়েছে তো? আমি একটা ওয়ে আউট (সমাধানসূত্র) বার করছি। আমার উপরে ছেড়ে দাও। যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়, তার চেষ্টা করছি’।” ইলিয়াস জানান, তার পরে মুখ্যমন্ত্রী আবার বলেন, ‘ইদের দিন, বৃষ্টি পড়ছে। ভিজছ কেন? বাড়ি যাও।’ ইলিয়াস বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলি, নমাজ পড়ে বাড়ি যাব।”

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা জানান, তাঁরা বিকেল ৪টে পর্যন্ত ধর্নামঞ্চে ছিলেন। আজ, বুধবার তাঁরা ফের ধর্নাস্থলে আসবেন। ইলিয়াসদের বক্তব্য, ২০১৯ সালে প্রেস ক্লাবের সামনে ধর্নার সময় মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। এ বারেও তাঁদের দাবি পূরণ না-হলে ধর্না-আন্দোলন চলবে।

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘গাড়িতে বসে হাত নাড়লেন কেন? যাওয়ার সাহস হল না? শুনলাম, পুলিশ নাকি ওদের সন্ত্রাসবাদী বলেছে। উনি তো চোখ দেখেই সন্ত্রাসবাদী চিনতে পারেন! তা হলে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন কেন?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, অসমের মতো রাজ্যে বেকারত্বের হার তিন শতাংশের কম। আমাদের রাজ্যে ৬.২ শতাংশ। আমাদের রাজ্যে চাকরি চাইতে গেলে অনশন করতে হয়।’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেড রোডে এ দিন দাবিপত্র দেবেন বলে প্রার্থীরা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়া হল। এ তো নরেন্দ্র মোদীর কায়দা! চাকরিপ্রার্থীরা হয়ে গেলেন সন্ত্রাসবাদী। আর সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা চাকরির অধিকার কেড়ে নিয়েছেন।’’ সুজনের সংযোজন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন বুঝেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে, তখন অফিসারেরা গিয়েছেন। কিন্তু এ-সব করে লাভ নেই। কবে নিয়োগপত্র দেবেন, সেটা স্পষ্ট করে বলুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement