মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফের পাহাড়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘‘২১ নভেম্বর পরের বৈঠক হবে দার্জিলিঙের পিনটেল ভিলেজে। আমি নিজে থাকব।’’
অর্থাৎ, এক মাসের বেশি সময় থাকল মমতার হাতে। এর মধ্যে পাহাড়ের পরিস্থিতি জরিপ করে নিতে পারবে পুলিশ-প্রশাসন। শুধু তাই নয়, এ দিনের বৈঠকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা তথা জিটিএ-এর চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ যে দাবিসনদ পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, সে সব বিবেচনা করে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দাবি বৈঠকেই মেনে নিয়েছেন মমতা।
আরও পড়ুন: চিকিৎসা ফেরাবেন না,বুদ্ধের বাড়িতে মমতা
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওঁরা (পাহাড়ের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা) দাবি করেছেন, আন্দোলনের জেরে যাঁরা তিন মাস অফিসে যেতে পারেননি, তাঁদের চাকরিতে যেন ছেদ না পড়ে। আমরা সেই দাবি মেনে নিয়েছি।’’ এ ছাড়াও আন্দোলনে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে কিংবা জখম হয়েছেন, তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন বিনয়রা। মমতা বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের দাবিও বিবেচনা করে দেখবে সরকার। আমরা তা দিয়ে দেব।’’
প্রশাসনের একাংশ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের আগে সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। তাই বিনয়দের প্রায় সব দাবি-দাওয়াই এক কথায় মেনে নিয়েছে নবান্ন।
নবান্নে এ দিনের বৈঠকে জিটিএ-র পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বেশ কয়েক দফা দাবি সনদ পেশ করা হয়েছে বলে বিনয় তামাঙ্গ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘জিটিএ-এর অধীনস্থ বিভিন্ন দফতরের অডিট চেয়েছি আমরা। একই সঙ্গে চা-শ্রমিকদের মজুরি-সহ আর্থিক পাওনাগণ্ডা যাতে বাগান মালিকরা মিটিয়ে দেন, সে ব্যাপারে রাজ্যের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’’ তিনি জানান, পাহাড়ের অশান্তির জেরে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫ জন। তাঁরা এখনও চিকিৎসাধীন। তাঁদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ জানতে সিবিআই বা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে।
তবে বিমল গুরুঙ্গকে নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি বিনয়। বলেছেন, ‘‘বিমলজি দার্জিলিঙে নেই। ওঁর ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না।’’ উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানোর সিদ্ধান্ত প্রশ্নেও।
এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি জিএনএলএফ নেতা নিরোজ জিম্বা-ও। তিনি বলেছেন, ‘‘পাহাড় নিয়ে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। বৈঠকে এ কথা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। কিন্তু গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর যে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে, সে কথা তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।’’
পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার, এ দিন ছিল তার তৃতীয় বৈঠক। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, গোর্খা লিগ এবং জিএনএলএফের মতো পাহাড়ের একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা বৈঠকে যোগ দিলেও গরহাজির ছিলেন জন আন্দোলন পার্টির নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী।