Mamata Benerjee on CAA

‘ছেলের হাতের মোয়া? এ রাজ্যে কারও নাগরিকত্ব যেতে দেব না’! মোদী সরকারকে তোপ মুখ্যমন্ত্রী মমতার

রবিবার বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল। তার মধ্যে সোমবার সিএএ চালু নিয়ে সম্ভাবনার মধ্যে নবান্নে আচমকা সাংবাদিক বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ১৭:৫০
Share:

নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের আগেই দেশ জুড়ে চালু হয়ে যেতে পারে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। সোমবার সন্ধ্যায় এই নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই সম্ভাবনার মধ্যে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলায় কিছুতেই সিএএ চালু করতে দেবেন না। মোদী সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘সাহস থাকলে (সিএএ) আগে করতেন। লোকসভা ভোটের আগেই করতে হল কেন?’’

Advertisement

সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘নির্বাচন এলে কিছু একটা খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ওরা। ইতিমধ্যে কিছু সংবাদমাধ্যম দেখাতে শুরু করেছে, আজ রাতের মধ্য়ে নাকি সিএএ চালু হবে। আমার কথা হল, ২০২০ সালে সিএএ পাশ হয়েছিল। তার পর চার বছর লেগে গেল! আজ নির্বাচনের দু-তিন দিন আগে সিএএ চালু করার প্রয়োজন হল? আসলে এটা রাজনৈতিক পরিকল্পনা।’’

২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে সিএএ পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। সংসদের দু’কক্ষে পাশ হওয়ার পরে দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে এত দিন ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তার মধ্যে সোমবার সিএএ নিয়ে চাপানউতর শুরু হয়েছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করছিলাম সিএএ আইনটায় আসলে কী করেছে। এখনও নোটিফিকেশন পাইনি। আইনে কী বলা হয়েছে, পুরো রিপোর্ট দেখার পর আগামিকাল সভা থেকে সে নিয়ে ঘোষণা করব।’’ মমতার সংযোজন, ‘‘তবে যদি কোনও বৈষম্য হয়, সে জিনিস আমরা মানি না। সেটা ধর্ম বৈষম্য হোক বা বর্ণ বৈষম্য।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী সিএএ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে আরও বলেন, ‘‘ছেলের হাতে মোয়া? কাউকে নাগরিকত্ব দিতে পারবে না। জাস্ট শো অফ! বলবে, ‘আপনারা পোর্টালে নাম লেখান।’ তখন সব ধর্মের মানুষই নাম লেখাবেন। কিন্তু সেই নাম আদৌ কার্যকর হবে?’’

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁদের ভোটে সরকার তৈরি হয়েছে, তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে কী ভাবে প্রশ্ন তুলতে পারে বিজেপি! তিনি বলেন, ‘‘এ জন্যই কি মতুয়া ভাই, নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড বাতিলের চক্রান্ত হয়েছিল? কিন্তু আমরা তো সবাই নাগরিক। ভোট আজ আছে। কাল ফুরিয়ে যাবে। আর সিএএ একটা ছলনা। আমি বিশ্বাস করি, বাংলায় যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা সবাই এ রাজ্যের নাগরিক। তাঁদের নাগরিক অধিকার, তাঁদের সামাজিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকার— সবই থাকবে। এই নতুন আইন সেই অধিকার খর্ব করবে না তো?’’ মমতা জানান, তিনি ভাল ভাবে আইন দেখেশুনে আরও বিস্তারিত তথ্য দেবেন।

এই প্রতিবেদন লেখার সময়ই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিএএ চালু হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা অভিযোগ করেন, সাহস থাকলে সিএএ আগেই করতে পারত কেন্দ্র। লোকসভা ভোটের আগে এই সিদ্ধান্তকে ‘ছলনা’ এবং ‘প্রতারণা’ বলেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকের শেষের দিকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমাদের বক্তব্য আগেই জানিয়ে রাখলাম। কাগজ দেখে বাকি প্রতিক্রিয়া দেব। তবে একটা জিনিস— সিএএ নিয়ে কী করবে আমার ‘ডাউট’ আছে। কেউ ভয় পাবেন না। আধার কার্ড যখন বাতিল করা হচ্ছিল, আমরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আজও যদি কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়, তৃণমূল একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা সর্ব প্রথম আওয়াজ তুলবে। তার সূচনা এখনই করে দিলাম।’’ কটাক্ষের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘‘মধ্যরাত্রে কী ফুল ফুটবে সেটা তো কেউ জানি না। তবে সন্ধ্যায় বলে দিলাম, মধ্যরাতে এমন কিছু করবেন না। এটা ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট নয়। সাহস থাকলে ছ’মাস আগে করতেন। চার বছর অপেক্ষা করতে হল কেন?’’

মমতা আরও বলেন, ‘‘দেশের কিছু ভাল হলে আমরা অভিনন্দন জানাই। তেমনই কিছু খারাপ হলে আমরা প্রতিবাদ করি। সিএএ নিয়ে কী করবে আমাদের ‘ডাউট’ আছে। চিন্তা করবেন না। কাউকে বঞ্চিত হতে দেব না। এনআরসি করতে দেব না। এনআরসি, সিএএ কে পকেটে ঝুলিয়ে একটা কাক মেরে অন্য কাককে ভয় দেখানো— এটা আমরা করতে দেব না। বাংলা সবার জন্য।’’ সাংবাদিক বৈঠকের শেষে এসে মমতা বলেন, ‘‘আমি আগে রুলস্ নোটিফিকেশন দেখব। আগামিকাল সেটা দেখে যা বলার বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন