আজ বাঁকুড়ায় মমতা বৈঠকে কী হবে, প্রশ্ন প্রশাসনে

মাঝে আর একটি দিন। তার পরেই মুখোমুখি হতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর। আজ, সোমবার বাঁকুড়া জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন প্রকল্পের গতি কেমন, তা সরেজমিন পেশ করতে হবে তাঁর কাছে। কোন কোন দফতর পাশ মার্ক পাবে, আর কোন দফতরের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের মুখে পড়তে হয়, তা নিয়ে চাপা টেনশন চলছে বাঁকুড়া জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের মনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share:

মাঝে আর একটি দিন। তার পরেই মুখোমুখি হতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর। আজ, সোমবার বাঁকুড়া জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন প্রকল্পের গতি কেমন, তা সরেজমিন পেশ করতে হবে তাঁর কাছে। কোন কোন দফতর পাশ মার্ক পাবে, আর কোন দফতরের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের মুখে পড়তে হয়, তা নিয়ে চাপা টেনশন চলছে বাঁকুড়া জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের মনে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য অক্টোবর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিল প্রশাসন। তবে মাঝে দু’দফায় তাঁর সফর বাতিল হয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জেলায় ঢুকেই বারিকুলের ফুলকুসমায় প্রশাসনিক সভা করবেন। কাল বুধবার মুকুটমণিপুরের বারোঘুটুতে জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক নির্ধারিত হয়ে রয়েছে তাঁর।

এমনিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জেলায় জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করে উন্নয়নমূলক কাজকর্মের খতিয়ান নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে মমতার। সেই সব বৈঠকে হাজির থেকে প্রশাসনের আধিকারিকদেরও সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। তবু, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করতে আসছেন শুনলেই বুকে ধুকপুকানি হয়। কারণ, এ ধরনের বৈঠকে পুরোদস্তুর হোমওয়ার্ক করেই আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে সব কাজের অগ্রগতির হিসাব থাকে। ফলে, এ বারের বৈঠকেও কার ভাগ্যে প্রশংসা, কার জন্যই বা ভর্ৎসনা—তার আগাম আঁচ প্রশাসনের কোনও কর্তাই করতেই পারছেন না।

Advertisement

ঘটনা হল, বছরে একশো দিনের কাজ, গীতাঞ্জলি, নির্মল বাংলার মতো বিভিন্ন প্রকল্পের গতি শ্লথ হলেই মুখ্যমন্ত্রীর বকাঝকা শুনতে হয় প্রশাসনের কর্তাদের। চলতি অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত জেলায় বছরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে মানুষ কাজ পেয়েছেন গড়ে ২৮ দিন। সেই অর্থে প্রকল্পের গতি ভাল না হলেও এখনও পর্যন্ত লেবার বাজেট বেশ ভাল এই জেলার। প্রায় ৭১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ একশো দিনের কাজ পেয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “লেবার বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা পার করে দিয়েছি আমরা। সে ক্ষেত্রে শ্রম দিবস কম হলেও অনেকটা রক্ষে পাওয়া যাবে।’’ তবে নির্মল বাংলা প্রকল্পের গতি বেশ শ্লথ। যা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, নির্মল বাংলা প্রকল্পে চলতি অর্থবর্ষে এক লক্ষ শৌচালয় বানানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা। এখনও পর্যন্ত গড়া গিয়েছে ৪৫ হাজার শৌচালয়। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের গতি দেখে আদৌ সন্তুষ্ট হবেন কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার যদিও দাবি, “এই প্রকল্পে কেন্দ্রই সময় মতো টাকা পাঠাচ্ছে না। তাই কাজের গতি কম।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীও বলেন, “নির্মল বাংলা প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা বাকি ছিল। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০ কোটি টাকা পেয়েছি। জেলা পরিষদ থেকে টাকা দিয়ে শৌচালয় গড়তে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার ফুলকুসমার বালি মাঠের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন সবুজশ্রী প্রকল্পের। এই প্রকল্পে শিশু সন্তান জন্মালেই পঞ্চায়েত থেকে তার জন্ম শংসাপত্রের সঙ্গে সেগুন বা মেহগিনি-র মত একটি দামি গাছের চারাও দেওয়া হবে শিশুর পরিবারকে। গত জুনে বেলিয়াতোড় রেঞ্জ দফতরে বনমন্ত্রী বিয়নকৃষ্ণ বর্মনের কাছে সদ্যজাত শিশুকন্যাদের পঞ্চায়েত থেকে জন্মশংসাপত্র দেওয়তার সময় মূল্যবান গাছের চারা দেওয়ার প্রকল্প গড়ার আবেদন জানিয়েছিলেন জেলা সভাধিপতি। বনমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবুজশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত সদ্যজাতকেই মূল্যবান গাছের চারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। অরূপবাবুর কথায়, “শিশুটির সঙ্গে সঙ্গে চারা গাছটিও বৃদ্ধি পাবে। উচ্চশিক্ষা বা কন্যা সন্তানের বিয়ের ক্ষেত্রে টাকা পয়সার অভাব মেটাতে সাথী হবে গাছটি।’’

জেলায় এসে এবার প্রায় ৮৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement