ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে তখন ১৮ ডিগ্রি। বইছে হিমেল হাওয়া। চকবাজার থেকে বের হওয়া মোর্চার মিছিলের সামনে সারিবদ্ধ শৈশব। কারও মেরেকেটে পাঁচ। কেউ বা আরও কম। দুধের মুখেই স্লোগান। ঠিক পিছনেই খালি গায়ে দশ বা বারোর কৈশোর। গলায় ঝুলছে শেকল। হাতে পায়ে লোহার বেড়ি।
খালি পিঠে গোর্খাল্যান্ড লেখা শৃঙ্খলিত কিশোরদের এই মিছিলের পরে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে মোর্চা। যদিও মোর্চা নেতারা দাবি করেছেন, বাবা মাকে দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়েছে শিশু-কিশোররা। আর তাদের রাস্তায় নামাও নাকি নিজেদের ইচ্ছেতেই।
কিন্তু পাহাড়েই কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ওইটুকু শিশুর আবার ইচ্ছে-অনিচ্ছে কী?’’ আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে শৈশব ও কৈশোরের এমন ব্যবহার পাহাড়ে নতুন নয়। ঘিসিঙের আন্দোলনে যখন অগ্নিগর্ভ পাহাড় সেই ৮৬-৮৭ সালেও নজর টানতে বারে বারেই সামনে আনা হয়েছিল ছোটদের।
আরও পড়ুন: প্লাস্টিক নিয়ে নরম পুরসভা
চকবাজারের মিছিলের পর শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলায় চাপ বাড়ে পুলিশ প্রশাসনের উপরেও। যদিও তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না পুলিশ।
তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এবং এই অগণতান্ত্রিক কাজকে সমর্থন করা যায় না।’’ বিভিন্ন কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংসদগুলিও বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি দিচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।
শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সামিল করা নিয়ে বির্তক রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ২০১৩ সালে ১৬ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা গিয়েছিল চার শিশুকে পাশে দাঁড় করিয়ে একটি নতুন আইনে সই করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। সেই ছবি ঘিরে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট শিশু সুরক্ষা বিধি ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার মাসখানেক আগে আমেরিকার স্যান্ডি হুক স্কুলের সামনে আততায়ীর এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ২০ শিশুর। তারপরেই সে দেশের বন্দুক রাখার আইন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। নিউ ফেডারেল গান ভায়োলেশন কন্ট্রোল আইনে সই করার মুহূর্তে শিশুদের সাক্ষী রাখতে গিয়েই বিপাকে পড়তে হয়েছিল ওবামাকে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল এবং বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় কোনও শিশুকেই রাজনৈতিক মিছিলে সামিল করা যাবে না। এমন কী ছুটির দিনেও শিশুদের রাজনৈতিক মিটিং, মিছিলে ডাকা যাবে না।
এ দিন পাহাড়ের ছবি দেখে এত ভাবনা চিন্তার কিছুই বোঝার উপায় ছিল না।
জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টি, গোর্খা লিগের কয়েকজন নেতা অবশ্য শিশু-কিশোরদের এ ভাবে মিছিলে সামিল করাটা মানতে পারছেন না। তাঁরা একান্তে জানান, আজ, বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠকে বিষয়টি তোলার চেষ্টা করবেন।