ডোকলাম এড়িয়ে ঘুরপথে চিনের চোখ শিলিগুড়ি করিডর!

লোকসভা ভোটের আগে যাতে কোনও বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, তার জন্য সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে যাবতীয় সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রককে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৮
Share:

১) ডোকলাম মালভূমি ২) ভুটানের ভিতরে চিনের তৈরি রাস্তা ৩) ডোকলাম সংলগ্ন চিনের হেলিপ্যাড

আপাত ভাবে সংঘাতের বাতাবরণ নেই। কিন্তু গোটা বিষয়টাই ছাইচাপা হয়ে রয়েছে। যে কোনও সময়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে ডোকলাম। যার প্রভাব পড়তে পারে শিলিগুড়ি করিডরে।

Advertisement

লোকসভা ভোটের আগে যাতে কোনও বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, তার জন্য সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে যাবতীয় সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রককে। সংসদে বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, উদ্বেগের কারণ নেই। কিন্তু মন্ত্রকেরই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে যেমন বিপদের আভাস দেখা যাচ্ছে, তেমনই ভারতীয় প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পরিস্থিতি নিরঙ্কুশ নয়।

কেন?

Advertisement

সূত্রের খবর, ৮৯ বর্গ কিলোমিটারের ডোকলাম মালভূমির প্রায় ৫০ বর্গ কিলোমিটার এখন চিনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৩৯ বর্গ কিলোমিটার ভারতের আওতায়। চিনের সেনা, প্রশাসন বা আম নাগরিকদের গতিবিধি ভুটানের হা জেলায় ক্রমশই বাড়ছে। ডোকলামও ওই হা জেলার মধ্যে। কিন্তু সরাসরি ডোকলামের রাস্তা এড়িয়ে অন্য পথে চিন ক্রমশই শিলিগুড়ি করিডরের দিকে এগিয়ে আসছে।

এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ভারত-ভুটান-চিনের সীমান্ত মিশেছে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার খুব কাছে। সিকিমের কুপুপের কাছে এখন যেখানে চিনা সেনার ঘাঁটি রয়েছে, সেখান থেকে শিলিগুড়ি করিডরের নাগরাকাটা আকাশপথে মোটামুটি ৪৫-৫০ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব কমাতেই চিনা সেনা ডোকলাম কব্জা করতে চাইছে। কারণ, ডোকলাম থেকে নাগরাকাটার আকাশপথে দূরত্ব বড়জোর ২৫ কিলোমিটার।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, ডোকলামে স্থিতাবস্থা চলছে বলে এখন হা জেলার মধ্যেই অন্য রাস্তা খুঁজছে চিন।

যাতে ভুটানের মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে ঘাঁটি গাড়া সম্ভব হয়। ডোকলামে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কংক্রিট হেলিপ্যাড, কংক্রিটের ছাউনি, সুড়ঙ্গ, নজরদারি টাওয়ার তৈরি করেছে চিনা সেনা।

বেশ কিছু নতুন বাঙ্কারও বানিয়েছে। আর রাস্তা তো তৈরি করেইছে। তবে ডোকলামের সর্বোচ্চ অংশটিতে ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকায় নজরদারির দিক দিয়ে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত-বিবাদ নিয়ে চিনের আলোচনা চলছে ঠিকই। কিন্তু তার আগেই ভুটানের পশ্চিম দিকে ক্রমেই এগিয়ে আসছে চিন। টহলদারি চালাচ্ছে। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘ভুটানের মিডল সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থিম্পুকে ছেড়ে দিতে চায় চিন। তার বদলে পশ্চিম ভুটানে ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিতে চায় তারা। এই অংশ সিকিম ও কালিম্পং লাগোয়া। গত ২৪-২৫ জুলাই চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী কং শুয়াংইউ থিম্পুতে গিয়ে ফের একই প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন।’’ ওই গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দেশের যা কথাবার্তাই হোক না কেন, পশ্চিম ভুটানের ২৬৯ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চিনা

সেনার অবাধ গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে মাসে এক বা দু’বার চিনের সেনা ‘লং রুট পেট্রলিং’-এ ভুটানের ভিতরে যেত। এখন প্রায়ই তাদের ওই এলাকায় দেখা যাচ্ছে। চিনের আম নাগরিকেরাও মাঝে-মধ্যে ভুটানি সেনার শিবিরে এসে কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। এ সবে ভুটানের দিক থেকেও তেমন কোনও বাধা আসছে না।

এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। যদিও গত ৭ মার্চ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ লোকসভায় জানান, ২০১৭-এর ২৮ অগস্টের পরে ডোকলাম বা সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে আর কিছু হয়নি। এক প্রতিরক্ষা বিশেষ়জ্ঞের কথায়, ‘‘ভুটানের পারোতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি রয়েছে। পারো থেকে হা জেলায় পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। ফলে এতটা উদ্বেগেরও কোনও কারণ নেই।’’ হাসিমারা ও পানাগড় বিমানঘাঁটি যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখে বলেও জানান তিনি।

তবু সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ ডোকলামে কিছু না-ঘটলেও ২০১৭-এর ২৮ ডিসেম্বর অরুণাচলের আপার সিয়াং জেলার শিয়ুং লা-তে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে এসেছিল চিনা সেনা। ভারতের আপত্তি ও সীমান্ত বৈঠকের পরে তারা ফিরে যায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ৫৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) জানিয়েছে, চিন সীমান্ত বরাবর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে গতি আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে তারা।

এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের মহড়াও। সীমান্তে হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রায় আইটিবিপি-র কাজের সুবিধার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক ছাউনি তৈরির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন