জামিন চুনুলালের, আতঙ্কে ইসিএল-কর্তারা

গ্রেফতার হওয়ার পর দিনই জামিন পেয়ে গেলেন রানিগঞ্জের জেকে নগরের আইএনটিটিইউসি নেতা চুনুলাল মিশ্র। শুক্রবার আসানসোল আদালত ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁকে জামিন দেয়। খনি-কর্তাকে মারধর ও হুমকিতে অভিযুক্ত এই নেতা তড়িঘড়ি জামিন পেয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি চেপে রাখেননি ইসিএলের আধিকারিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

চুনুলাল মিশ্র।—ফাইল চিত্র

গ্রেফতার হওয়ার পর দিনই জামিন পেয়ে গেলেন রানিগঞ্জের জেকে নগরের আইএনটিটিইউসি নেতা চুনুলাল মিশ্র। শুক্রবার আসানসোল আদালত ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁকে জামিন দেয়। খনি-কর্তাকে মারধর ও হুমকিতে অভিযুক্ত এই নেতা তড়িঘড়ি জামিন পেয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি চেপে রাখেননি ইসিএলের আধিকারিকেরা। ইসিএলের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “এ ভাবে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে কী করে?”

Advertisement

আবার এ দিনই জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হওয়া সত্ত্বেও ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন জামুড়িয়ার সত্যম স্মেলটার্স কারখানার ঠিকাদারের কাছে তোলা আদায়ে অভিযুক্ত তিন জন। নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া পুলিশ মামলা রুজু করায় তাঁরা জামিন পেয়েছেন বলে সরকারি আইনজীবী জানান।

এই জোড়া-জামিন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, “অভিযুক্তেরা শাসক দলের নেতা। শাসক দলের মদত ছাড়া এ ভাবে ওঁরা ছাড়া পেতেন না।” ওই সিপিএম নেতার কটাক্ষ, “বিরোধী দলে থাকাকালীন ওঁরা সিঙ্গুর থেকে শিল্প তাড়াতে নেমেছিলেন। এখনও সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত! শ্যাম সেল গোষ্ঠীর ১০ হাজার কোটি টাকার সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও অনিশ্চিত। এ ভাবে চললে মুখ্যমন্ত্রী যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন, তার বিমানভাড়াও উঠবে না! কারণ, ওই অঙ্কের বিনিয়োগও আসবে না!” প্রায় এক সুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, “তোলাবাজির জন্যই রাজ্য থেকে শিল্প চলে যাবে। শিল্পপতি ধরতে সিঙ্গাপুর যাওয়ার দরকার নেই। যাঁরা রাজ্য ছেড়ে যেতে চাইছেন, তাঁদের আগে আটকান!”

Advertisement

তবে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “বাম জমানায় সূযর্বাবুরা যা করতেন, এখন ওঁরা ভাবছেন, আমরা তা করছি। কিন্তু আমাদের দল আইনি বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করে না।”

চুনুলালের বিরুদ্ধে খনির ম্যানেজারকে মারধর ও অফিসারদের ফোন-এসএমএসে হুমকির মোট তিনটি অভিযোগ করেছিলেন খনি কর্তৃপক্ষ। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে খনি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে নোটিস দেয় ইসিএল। মারধরের ঘটনায় চুনুলাল আগেই জামিন নিয়ে নেন। বাকি দু’টি অভিযোগে বৃহস্পতিবার চুনুলালকে ধরে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ (ভয় দেখানো) ও ৬৬ আইটি (ফোন, এসএমএস ইত্যাদির মাধ্যমে হুমকি) ধারায় মামলা হয়। সব ক’টি ধারাই জামিনযোগ্য। আর তা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি খনি-কর্তারা। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আপাতত খনি বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হচ্ছে। তবে আমরা ওই কোলিয়ারির পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে চাই। ভবিষ্যতে ফের এমন ঘটলে আমরা একই অবস্থান নেব।” চুনুলালের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এসএমএসেরও জবাব আসেনি।

গত মঙ্গলবার রাতে ইকড়া শিল্পতালুকের স্পঞ্জ আয়রন কারখানা সত্যম স্মেলটার্স কর্তৃপক্ষ পুলিশে অভিযোগ করেন, তাঁদের এক ঠিকাদার লরিতে মাল নিয়ে কারখানা থেকে বেরোনোর পরেই রাস্তা আটকায় হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, মুক্তি মুখোপাধ্যায় ও অরুণ আচার্য নামে তিন জন। সিন্ডিকেটের নামে তারা প্রতি টন মাল পিছু কুড়ি টাকা করে দাবি করে। অভিযুক্তেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৪ (বলপ্রয়োগ করে কিছু আদায়) ও ৩৪ (কোনও উদ্দেশ্যে একাধিক ব্যক্তির জড়ো হওয়া) নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়। আইনজীবীরা জানান, ৩৮৪ নম্বর ধারা জামিন-অযোগ্য। বৃহস্পতিবার তিন জনকেই ধরা হয়। এ দিন পুলিশ ধৃতদের আসানসোল আদালতে তুলে সাত দিন হেফাজতে চাইলেও তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক সুপ্রিয়া খাঁ।

জামিন-অযোগ্য ধারা সত্ত্বেও কী ভাবে ছাড়া পেলেন অভিযুক্তেরা? সরকারি আইনজীবী সুস্মিতা চক্রবর্তীর দাবি, যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তাতে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। তার ভিত্তিতে এই ধারায় মামলা হতে পারে না। সে কথা বিচারককে জানানোর পরেই অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর হয়। কেন উপযুক্ত তথ্য ছাড়া মামলা রুজু হল, সে নিয়ে মুখে কুলুপ পুলিশের। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে যা করা উচিত, তা করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলব না।” কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন