তাপসকে চার্জশিট, তবু সংশয়ে চৌমুহা

চৌমুহায় তাঁর বক্তব্য যে সাদামাঠা ছিল না, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পলের বিরুদ্ধে দেওয়া সিআইডি-র চার্জশিটেই তা পরিষ্কার হল। তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে চারটি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে ওই অভিনেতা-সাংসদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

চৌমুহায় তাঁর বক্তব্য যে সাদামাঠা ছিল না, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পলের বিরুদ্ধে দেওয়া সিআইডি-র চার্জশিটেই তা পরিষ্কার হল। তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে চারটি ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে ওই অভিনেতা-সাংসদের।

Advertisement

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে সিআইডি শেষ পর্যন্ত তাপস পালের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর আদালতে চার্জশিট দিলেও, ওই সাংসদের অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা অনেক হাল্কা করে দেখিয়েছে বলে মনে করেন চৌমুহার বাসিন্দারা। তাই শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ওই সাংসদ অভিনেতা আদৌ সাজা পান কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে নদিয়ার এই জনপদটি। বিশেষ করে বাড়িতে লোক ঢুকিয়ে মহিলাদের ধর্ষণ করার যে হুমকি তাপস দিয়েছিলেন, তাতে সিআইডি-র আরও জোরালো ধারা প্রয়োগ করার উচিত ছিল বলে মনে করে চৌমুহা। চার্জশিট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য এ দিন তাপসকে ফোন ও এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।

তৃণমূলের স্থানীয় সাসংসদের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় অভিযোগ এনেছে সিআইডি?

Advertisement

আদালত সূত্রের খবর তাপস পালের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ (শান্তিভঙ্গের জন্য অপমানজনক কথা বলা), ৫০৫ (এমন কথা বলা যাতে উত্তেজনা ছড়ায়), ৫০৬ (অপরাধমূলক হুমকি দেওয়া) এবং ৫০৯ (মহিলাদের প্রতি কটূক্তি) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুটির ক্ষেত্রে শাস্তি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। ওই দিন যে সভায় তাপসবাবু সিপিএম কর্মীদের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েছিলেন, তার এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, ‘‘মহিলাদের যে ভাবে উনি অপমান করেছেন, ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন, তাতে ওঁর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’’ কেউ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘যারা অন্যায় করছে, পুলিশ তাদের পাশেই দাঁড়াচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশিত তদন্তেও আট মাস পরে চার্জশিট দিল সিআইডি। সুবিচার না পেলে আমরা ফের হাইকোর্টে যাব।’’

গত বছর জুন মাসে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার চৌমুহা গ্রামে কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল কুকথার ঝড় বইয়েছিলেন। ‘ঘরে দলের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব’, কিংবা ‘নিজের রিভলভার থেকে গুলি করে মারব’— এমন হুমকিও দিয়েছিলেন। প্রথমে সেই ঘটনায় নাকাশিপাড়া থানায় সাংসদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় এক মহিলা। পুলিশ অবশ্য একটি জেনারেল ডায়েরি করেই দায় সারে। এর পর নাকাশিপাড়া থানাতেই ফের তাপসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কলকাতার বিরাটির বাসিন্দা, সমাজকর্মী বিপ্লবকুমার চৌধুরী। তার পরেও তাপসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের না হওয়ায় বিপ্লববাবু সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি নিশীথা মাত্রে সিআইডি-কে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ বিপ্লববাবুর অভিযোগকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার পরে তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

কৃষ্ণনগরের এসিজিএম আদালতে চার্জশিট পেশ করে এ দিন সরকারি আইনজীবী বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২৬ মে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিআইডি।’’ সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯ পাতার ওই চার্জশিটে নাকাশিপাড়ার তৎকালীন ওসি সহ মোট ৪৮ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে। সিআইডি-র এক কর্তার দাবি, তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে চৌমুহা গ্রামে গিয়েছিলেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তার ভিডিও রেকর্ডিংও করা হয়। সংগ্রহ করা হয় তাপসের কুকথার ভিডিও। পরবর্তী পরিস্থিতিতে তদন্তের স্বার্থে তাপসকে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। তাপস পাল চৌমুহার ঘটনার পরে ক্ষমা চেয়ে কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে বসে একটি সাক্ষাৎকারও দেন। সেই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছিল দুরদর্শনে। ওই ভিডিও ক্লিপিংও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। এক তদন্তকারীর দাবি, তাপস যে চৌমুহাতে বিতর্কিত কিছু মন্তব্য করেছিলেন, তা তাঁর ক্ষমা চাওয়া থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

চৌমুহা কিন্তু এখনও ক্ষমা করতে পারেনি তাপস পালকে। ১৪ জুন চৌমুহার বটতলায় বাবার হাত ধরে অভিনেতা তাপস পালকে দেখতে গিয়েছিল গ্রামেরই এক কিশোরী। এ বার সে মাধ্যমিক পাশ করেছে। সিআইডির চার্জশিট জমা পড়ার খবর শুনে সে বলে, ‘‘সে দিন নায়ককে দেখব বলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর মুখ থেকে যা শুনেছিলাম, তা মনে পড়লে আজও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। যে মানুষটা এমন কথা বলতে পারেন, তাঁর কঠোর সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু তা আদৌ হবে কি?’’

বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন যিনি, সেই বিপ্লবকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘সিআইডি-র ভূমিকা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। দিন কুড়ি আগেই আমি সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছি। পাছে আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, সেই ভয়েই সিআইডি চার্জশিট জমা দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন