CID

‘তথ্য পাচারে’ গ্রেফতার ঘনিষ্ঠ পুলিশকর্মী, ভারতীর বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে সিআইডি

কিন্তু,ভারতী ঘোষের হাতে কী ভাবে ওই ‘সিডিআর’ পৌঁছে গেল? তদন্তে নেমে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ওই তথ্য পাচারের নেপথ্যে দাসপুর মামলায় গ্রেফতার হওয়া পুলিশ অফিসার প্রদীপ রথকেই অভিযুক্ত করছেন গোয়েন্দারা। ওই মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রদীপবাবু। পরে তিনি জামিনও পেয়ে যান।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:৪৪
Share:

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

এ যেন ব্যুমেরাং! রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁকে ‘ফাঁসানো’র অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে নথি জমা দিয়েছিলেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ। গোপন ওই তথ্য তিনি কী করে পেলেন, সেই প্রশ্ন তুলে কি এ বার প্রাক্তন ওই পুলিশ কর্তাকেই ‘প্যাঁচে ফেলতে’ চাইছে রাজ্য? ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন ওই তথ্য পাচারের অভিযোগে শুক্রবার মামলা রুজু করে সিআইডি গ্রেফতার করেছে এক সময়ে ভারতীরই সহযোগী এক পুলিশ আধিকারিক প্রদীপ রথকে।

Advertisement

ভারতীদেবী এখন পুলিশের চাকরিতে নেই। সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এ রাজ্যেও দীর্ঘ দিন তাঁর দেখা মেলেনি।একটা সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলেন ভারতী ঘোষ। প্রশাসনিক সভায় মমতাকে জঙ্গলমহলের ‘মা’ বলেও সম্বোধন করেছেন তিনি। কিন্তু পরে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার পদ থেকে তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়। তার পরেই চাকরিতে ইস্তফা দেন তিনি। এর পরেই ওই জেলায় তাঁর নামে একাধিক মামলা দায়ের হয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল দাসপুর সোনা মামলা।

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের চকচাঁইপাটের চন্দন মাজির অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মামলার তদন্ত শুরু হয়। ওই মামলায় নাম জড়ায় দাসপুরের তৎকালীন ওসি প্রদীপ রথ এবং জেলা পুলিশের কয়েক জন আধিকারিকের। এর পর ওই মামলার দায়িত্ব নেয় সিআইডি। ভারতীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু ভারতীদেবী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে গ্রেফতারি এড়ান। এ বার সেই সুপ্রিম কোর্টেই ভারতী সিআইডির ‘বিরুদ্ধে যাওয়া’ বেশ কিছু গোপন নথি জমা দিয়েছেন।ঘনিষ্ঠ মহলে ভারতীদেবী দাবি করেছেন, তদন্তের নেপথ্যে সিআইডি আসলে কী চাইছে, সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া ওই নথি থেকেই তা প্রমাণ হয়ে যাবে। তাঁর দাবি, ওই ‘কল ডিটেলস’ থেকে প্রমাণিত হবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অভিযোগকারী এবং সাক্ষীদের ডেকে তাঁদের প্রভাবিত করা হয়েছিল। সিআইডি-র গোয়েন্দারা এ বিষয়ে বারবার তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সেই কথোপকথনই সম্প্রতি প্রমাণ হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে বলে ভারতী ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর।

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রশ্নোত্তর পর্ব দ্রুত শেষ করার অনুরোধ রাজীবের, সিবিআইয়ের ইঙ্গিত অন্য

কী সেই নথি? ভারতীর দাবি, দাসপুরে ওই মামলায় সিআইডি-র সঙ্গে অভিযোগকারী এবং সাক্ষীদের হওয়া কথাবার্তা বা ‘কল ডেটা রেকর্ড’ (সিডিআর)তিনি জমা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। মামলার ক্ষেত্রে এই ‘কল ডিটেলস’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন আইনজীবীরা।দাসপুর থানায় দায়ের হওয়া মূল এফআইআরে নাম না থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ ভারতীর। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি দাবি করেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলায় তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে। এমনকি সাক্ষী এবং অভিযোগকারীদের প্রভাবিত করেছে সিআইডি।” যদিও এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন সিআইডি-র এক কর্তা। তাঁর দাবি, ‘‘নিয়মমাফিক তদন্ত চলছে। যাঁদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু,ভারতী ঘোষের হাতে কী ভাবে ওই ‘সিডিআর’ পৌঁছে গেল? তদন্তে নেমে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ওই তথ্য পাচারের নেপথ্যে দাসপুর মামলায় গ্রেফতার হওয়া পুলিশ অফিসার প্রদীপ রথকেই অভিযুক্ত করছেন গোয়েন্দারা। ওই মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রদীপবাবু। পরে তিনি জামিনও পেয়ে যান। বর্তমানে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপারের অফিসে কর্মরত তিনি। অভিযোগ, প্রদীপবাবুই আলিপুরদুয়ারের এসপি-র ই-মেল ব্যবহার করে ওই মামলার অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের ‘কল ডিটেলস’ সংগ্রহ করেন। সেই তথ্য পরবর্তীকালে চলে যায় ভারতী ঘোষের হাতে। এমনটাই অভিযোগ।

ওই সিডিআর কি অবৈধ উপায়ে সংগৃহীত করা হয়েছে? এ বিষয়ে ভারতীদেবী বলেন, ‘‘আমি কী ভাবে ওই তথ্য পেয়েছি সেটা তো সুপ্রিম কোর্টকে জানাব। আমি যখন সুপ্রিম কোর্টের কাছে তথ্য পেশ করতে পেরেছি, তখন কী ভাবে পেয়েছি, সেটাও আদালত জানতে চাইলে জানাব তো বটেই।’’

আরও পড়ুন: নাগেশ্বরের বন্ধুর বাড়ি, সংস্থায় পুলিশি তল্লাশি

ভারতীদেবীর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বৈধ বা অবৈধ ভাবে পাওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই মামলায় রাজ্য সরকারের কী ভূমিকা ছিল। ওই সিডিআর খতিয়ে দেখলেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল কি না তা বেরিয়ে আসবে।’’

তথ্যপাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে, সিআইডি প্রদীপ রথকে গ্রেফতার করেছে। সিআইডি সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ার থানায় এ নিয়ে মামলাও রুজু হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৬৭, ১৬৮, ২১৭, ২১৮, ৪৬৮, ৪৭১, ৪০৯, ১২০বি ধারায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। এছাড়াও ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্টে মামলাও রুজু হয়েছে। যদিও এই গ্রেফতারির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিআইডি কর্তারা।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন