শিলংয়ের ওকল্যান্ডে সিবিআই দফতরে ঢুকছেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই সিবিআই কর্তাদের দ্রুত গোটা প্রক্রিয়া মেটাতে অনুরোধ করলেন কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার। যদিও সিবিআইয়ের তরফে তাঁকে এ বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।
শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ রাজীবকুমারকে শিলংয়েরর ওকল্যান্ডে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এ দিন তার আগেই ১০টা ৪৭ মিনিট নাগাদ মেঘালয় পুলিশের গাড়ি রাজীব কুমারকে এসকর্ট করে নিয়ে আসে সিবিআই দফতরে। মেঘালয় পুলিশেরই ঠিক করে দেওয়া ভাড়ার এসইউভিতে ছাই-ছাই রঙের স্যুট পরা রাজীব কুমারের সঙ্গী ছিলেন কলকাতা পুলিশের অন্য দুই কর্তা মুরলীধর শর্মা এবং জাভেদ শামিম।
তবে, রাজীব কুমার সিবিআই দফতরে পৌঁছনোর অনেক আগেই সেখানে পৌঁছন তাঁর আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব। মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎবাবু এখন তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক। ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে অসম বাদে তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলেরবাকি সব ক’টি রাজ্যের দায়িত্বে। সিবিআই দফতরে গিয়ে তিনি খোঁজখবর নেন, কোন পদমর্যাদার আধিকারিকরা ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকবেন।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের মুখোমুখি রাজীব, প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু, শিলং পৌঁছলেন কুণাল ঘোষও
রাজীব কুমার সেখানে পৌঁছনোর পর সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য বিনিময় পর্ব চলে। সিবিআই সূত্রের খবর, এক প্রস্থ চা-পর্ব মেটার পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হওয়ার আগেই রাজীব কুমারের সঙ্গী দুই পুলিশ কর্তাকে সিবিআই দফতর ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করা হয়। তাঁরা সওয়া ১২টা নাগাদ বেরিয়ে যান।চা-পর্বের সময়েই এই প্রশ্নোত্তর পর্ব এক বা দু’দিনের মধ্যে মেটাতে সিবিআই আধিকারিকদের অনুরোধ করেন নগরপাল। তিনি কলকাতায় তাঁর ব্যস্ততার কথাও উল্লেখ করেন। তবে সিবিআইয়ের তরফে কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি বলেই সূত্রের খবর।
সিবিআই সূত্রে খবর, রাজীব কুমারের বয়ান রেকর্ড করার সময় রয়েছেন তিন এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। সঙ্গে তদন্তকারী আধিকারিক তথাগত বর্ধন। তিন এসপি-র মধ্যে আছেন সিবিআই-এর দিল্লি থেকে আসা বিশেষ দলের এসপি জগরূপ এস গুসিনহা এবং কলকাতার পার্থ মুখোপাধ্যায় । সূত্রের খবর, দলে রয়েছেন সারদা তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের ইওডাব্লিউ-৪ এর এসপি পিএস কল্যাণও। সারদা রিয়েলটি মামলার সূত্র ধরেই তাঁরে সমন করা হয়েছে। সেই মামলার সূত্র ধরেই প্রশ্নোত্তর পর্ব এগোবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রাজীবের বিরুদ্ধে যে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে শীর্ষ আদালতে হলফনামা পেশ করেছিলেনসিবিআইয়ের এসপি পার্থ মুখোপাধ্যায়, সেই অভিযোগগুলিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। তার মধ্যে থাকবে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ বিতর্ক। কারণ সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই জিনিসগুলি বার বার চাওয়া সত্ত্বেও মেলেনি রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর অন্যতম সুপারভাইজিং অফিসার হিসাবে রাজীব কুমার ওই তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করেছেন।
আরও পড়ুন: আজও ম্যারাথন জেরা রবার্ট বঢরাকে, চার দিনে এই নিয়ে তৃতীয় বার
অন্যদিকে, রোজভ্যালি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুর্গাপুরে এফআইআর থাকা সত্ত্বেও কেন সিট সেই তথ্য গোপন করেছিল? এই প্রশ্নও থাকবে রাজীব কুমারের সামনে— এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ওই প্রশ্নোত্তর পর্ব কত ক্ষণে বা কত দিনে মিটবে তা সিবিআই আধিকারিকরা নির্দিষ্ট করে বলেননি। এক সিবিআই আধিকারিক বলেন,“ওঁর বয়ান বাকিদের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখতে হবে।”
সিবিআই কর্তার ওই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, রবিবারই শিলংয়ে সিবিআই দফতরে ডাকা হয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষকে। সারদা-কাণ্ডে রাজীব কুমারের সিট-ই গ্রেফতার করেছিল ওই সাংসদকে। সিবিআই সূত্রে খবর, রাজীব কুমারের তথ্য লোপাটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে কুণালকে জেরা করে। তাই পুলিশ কমিশনারের জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব রবিবারও গড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত সিবিআইয়ের।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy