খরচের ভয়ে এত দিন সিআইএসএফ নিয়োগ হয়নি গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সে

গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের নিরাপত্তার জন্য বহু দিন আগেই সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) মোতায়েন করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৫০
Share:

গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের নিরাপত্তার জন্য বহু দিন আগেই সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) মোতায়েন করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হয়নি। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের চর সন্দেহে গার্ডেনরিচের ওই জাহাজ কারখানার এক ঠিকা শ্রমিককে গ্রেফতারের পর কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফের সামনে এসেছে ওই সংস্থায় সিআইএসএফ মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা।

Advertisement

তা হলে এত দিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থায় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়নি কেন?

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচের এই জাহাজ নির্মাণ কারখানা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এমন সংস্থায় সিআইএসএফ মোতায়েন করতে হলে তার খরচ বহন করতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই। তাই গার্ডেনরিচে সিআইএসএফ মোতায়েন করা হলে বিরাট খরচের বোঝা চাপত ওই জাহাজ নির্মাণ সংস্থার ঘাড়ে। সেই বোঝা এড়াতেই সিআইএসএফ মোতায়েন নিয়ে খুব বেশি সক্রিয় হননি জাহাজ নির্মাণ সংস্থার কর্তারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের একাংশ বলছেন, কোনও সংস্থায় সিআইএসএফ থাকলে নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ ওঠে। তার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ব্যাহত হয় উৎপাদনের কাজ। ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই ধরনের গোলমালের আশঙ্কা তো আরও বেশি,’’ বলছেন এক প্রতিরক্ষা-কর্তা।

Advertisement

নৌ-সেনার একাংশ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, দেশের নিরাপত্তা যেখানে জড়িত, সেখানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করতেই হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যই যে এই কড়াকড়ি করা হচ্ছে, তা শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও বোঝাতে হবে। এ দিনই দিল্লিতে গার্ডেনরিচ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল রবিন ধবনকে। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ওই সংস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচের জাহাজ নির্মাণ সংস্থার ঠিকা শ্রমিক ইরশাদ আনসারিকে সন্দেহভাজন পাক চর হিসেবে গ্রেফতার করার পরেই পশ্চিমবঙ্গে নৌ-সেনার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কমোডর রবি অহলুওয়ালিয়া ওই জাহাজ নির্মাণ সংস্থার শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। নিরাপত্তা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয় দু’পক্ষের। বৃহস্পতিবার কমোডর অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘জাহাজ নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এক জন সন্দেহভাজন ঢুকে পড়ছে, এটা চিন্তার বিষয়। তবে ওই সংস্থা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ। আমরা শুধু পরামর্শ দিতে পারি।’’

নৌ-সেনা সূত্রের খবর, ওই কারখানার শ্রমিকদের নির্মীয়মাণ জাহাজে ওঠার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়াতে বলা হয়েছে। ঠিকা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে পুলিশি অনুসন্ধান বা ভেরিফিকেশন রিপোর্ট যাতে নেওয়া হয়, সে কথাও বলা হয়েছে। একটি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ঠিকা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দ্রুত পুলিশি ‘ভেরিফিকেশন’ জমা দিতে বলেছেন জাহাজ নির্মাণ সংস্থার কর্তারা। কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ওই সংস্থার শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি নেতা মোক্তার আহমেদ বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই এই কড়াকড়ি প্রয়োজন।’’

পুলিশি ‘ভেরিফিকেশনের’ ভিত্তিতে নিরাপত্তা কতটা জোরদার হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গার্ডেনরিচ জাহাজ নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলছেন, সন্দেহভাজন পাক চরেরা তো পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র জাল করেছিল। ‘‘সেখানে পুলিশের রিপোর্টে প্রভাব খাটানো এমনকী আহামরি ব্যাপার,’’ মন্তব্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত এক কর্তার।

গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ইরশাদ এবং তার শ্যালক জাহাঙ্গির মিলে পাকিস্তান থেকে এ দেশে আসা চর মহম্মদ ইজাজ ওরফে কালামকে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিয়েছিল। মেরঠে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে ইজাজ গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ইরশাদদের জাল পরিচয়পত্র তৈরির চক্রের শরিক হিসেবে বুধবারই কলকাতা পুলিশ শেখ বাদল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। গোয়েন্দাদের দাবি, কলকাতার পাসপোর্ট অফিসের দালাল বাদল পাক চর ইজাজের জন্য জাল ভোটার কার্ড তৈরি করেছিল। বৃহস্পতিবার বাদলকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ইরশাদদের জেরা করেই বাদলের নাম জানা গিয়েছে। সে দেশবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত। বাদলের আইনজীবী রাজেশকুমার গুপ্ত বলেন, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। দু’পক্ষের শুনানি শেষে বাদলকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক সঞ্জয়রঞ্জন পাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন