ক্লাসঘরের দখল নিয়ে দুই পক্ষের ধুন্ধুমার মানিকচকে

একই বাড়িতে সকালে কলেজ, বিকেলে স্কুল। সেই ভবনের ক্লাসঘরের দখল নিয়ে বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল মালদহের মানিকচকের মথুরাপুরে। কলেজের ছাত্ররা স্কুলের প্রধানশিক্ষককে হেনস্থা করেছেন ও এক শিক্ষককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মানিকচক শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

কলেজের জন্য বরাদ্দ করা ঘর ভাঙচুর উত্তেজিত ছাত্রদের।- নিজস্ব চিত্র।

একই বাড়িতে সকালে কলেজ, বিকেলে স্কুল। সেই ভবনের ক্লাসঘরের দখল নিয়ে বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল মালদহের মানিকচকের মথুরাপুরে। কলেজের ছাত্ররা স্কুলের প্রধানশিক্ষককে হেনস্থা করেছেন ও এক শিক্ষককে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ। স্কুলের ছাত্ররাও পাল্টা ভাঙচুর করেছে কলেজের জন্য বরাদ্দ ঘরগুলিতে। এই ঘটনার পরে মিনিট দশেকের জন্য জন্য মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কলেজ পড়ুয়ারা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদীর নেতৃত্বে র‌্যাফ ও বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও থমথমে রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চত্বর।

Advertisement

মানিকচকের মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুল ভবনেরই কয়েকটি ঘর নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে সদ্য গঠিত মানিকচক কলেজের পঠনপাঠন। প্রথম বর্ষে পাঁচশো জন পড়ুয়া ছিলেন। চলতি বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পনেরোশোতে। বাংলা, ইতিহাস, ইংরেজি, সংস্কৃত ও সমাজবিদ্যার পাস ও অনার্সের স্নাতক স্তরে পড়ানো হয় এই কলেজে। স্কুলের মোট পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে চলত কলেজ। তার মধ্যে একটি টিচার্স কমনরুম, আর একটি অফিস ঘর, অন্যটি কলেজের নিজস্ব গ্রন্থাগার। বাকি দু’টি ঘরে পঠনপাঠন হত। স্কুল কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মাস তিনেক ধরে তিন তলার একটি হলঘরেও কলেজের ক্লাস হচ্ছিল।

এই হলঘরটি নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। দোতলা থেকে ওই হলঘরে যাওয়ার সিঁড়িতে একটি গ্রিলের দরজা রয়েছে। নিচু ক্লাসের পড়ুয়ারা যাতে ছাদে চলে যেতে না পারে, তাই দরজাটি সাধারণত বন্ধ রাখতেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু ক্লাসের সময়ই দরজা খোলা হত। স্কুলের প্রধানশিক্ষক আজিজুর রহমান জানান, ওই ঘরটি কলেজ কর্তৃপক্ষ নেওয়ার পরে দরজায় আর তালা দেওয়া হয় না। তাঁর দাবি, বারবার বলার পরেও দরজা হাট করে খোলা থাকত। তিনি বলেন, ‘‘তাই নিচু ক্লাসের ছাত্রদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাধ্য হয়েই আমি বুধবার ওই দরজায় তালা দিয়ে দিয়েছিলাম।’’

Advertisement

এ দিন সকালে কলেজে এসে ছাত্রছাত্রীরা দেখেন তিন তলায় ওঠার দরজা বন্ধ। । বেলা দশটা নাগাদ স্কুলের শিক্ষকরা এক এক করে আসতে শুরু করার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রদের একাংশ। প্রধানশিক্ষকের ঘরে ঢুকে তাঁকে হেনস্থা করে ওই ছাত্ররা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। ধর্মরাজ মণ্ডল নামে অঙ্কের এক শিক্ষককে মারধর করা হয়। স্কুলের ছাত্রেরাও তখন আসতে শুরু করেছে। প্রধানশিক্ষককে হেনস্থা হতে দেখে স্কুল পড়ুয়াদের একাংশও কলেজের গ্রন্থাগার, টিচার্স রুম ও আরও একটি শ্রেণিকক্ষে তাণ্ডব চালায়। কলেজের নাম লেখা ব্যানারটিও ছিড়ে ফেলা হয়। পুলিশ ও র‌্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধর্মরাজবাবুকে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।

এই ঘটনায় স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রদ্যোৎ ঘোষের দাবি, ‘‘প্রধানশিক্ষক পরিকল্পিত ভাবেই হলঘরে যাওয়ার তালা বন্ধ করে রেখেছিলেন। এতে কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করলে প্রধানশিক্ষক তাঁর স্কুলের ছাত্রদের উস্কানি দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটালেন। স্কুলের অন্য কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও মদত দিয়েছেন।’’ প্রধানশিক্ষকের বক্তব্য, প্রাচীন এই স্কুলে প্রায় তিন হাজার ছাত্রছাত্রী, তবু কলেজের কথা ভেবে অনেক সাহায্য করা হয়। তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের উস্কানিতেই কলেজ পড়ুয়ারা এসে আমাদের ঘরে ভাঙচুর চালায়। শিক্ষকদের হেনস্থা করে। তা দেখে স্কুলের পড়ুয়াদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেছে।’’ পুলিশ এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিন ঘটনাস্থলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই কলেজে এ দিন যা ঘটেছে তার রিপোর্ট তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।’’ এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, ‘‘এ দিন যা ঘটেছে তা কখনও কাম্য নয়। দু’পক্ষরই উচিত মিলেমিশে পঠনপাঠন করা। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য পুলিশকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’

স্কুল চত্বর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তাঁদের নিজস্ব ভবন তৈরি হচ্ছে। তবে তা শেষ হতে এখনও মাস চারেক লাগবে। আজ, শুক্রবার কলেজ বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের খোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন