দিল্লি নির্দেশ দিলেই মানার দরকার নেই। আগে বুঝে নিতে হবে, রাজ্য কী চায়।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নিজের ‘জেহাদ’কে আর এক ধাপ চড়িয়ে নিয়ে সোমবার ডব্লিউবিসিএস অফিসার সংগঠনের বার্ষিক সভায় এমনই নির্দেশ দিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ব্যাপারটা নতুন নয়। বস্তুত বেশ কিছু দিন ধরেই মমতা বারবার রাজ্য প্রশাসনের অফিসারদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তাঁরা আদতে রাজ্য সরকারের অফিসার, কেন্দ্রের অধীনস্থ নন। তাই তাঁদের দায়বদ্ধতা রাজ্যের প্রতি। এই অবস্থানেরই রেশ টেনে এ দিন ডব্লিউবিসিএস এগ্জিকিউটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে অনেক সময়ে নানা নির্দেশ আসে। অনেক কিছু তথ্য পাঠাতে বলে। কিন্তু আমাদের জিজ্ঞেস না-করে ওই সব কাজ করবেন না। যে হেতু আপনারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আছেন, তাই আগে জেনে নেবেন, আমাদের মনোভাব কী।’’ বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেন।
প্রশাসনিক অফিসারদের মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন বক্তব্যকে দিল্লির প্রতি ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবেরই প্রকাশ হিসেবে দেখছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ। কারণ, আগেও মুখ্যমন্ত্রী নানা ভাবে রাজ্য প্রশাসনে দিল্লির ‘ছোঁয়াচ’ এড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরা আট নব্য আইএএস’কে নানা দায়িত্ব দিয়ে সচিবালয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে, মহকুমাস্তরে গিয়ে প্রশাসনিক কাজের ময়দানে নামতে দেওয়া হয়নি। নবান্নের অন্দরে জল্পনা, ওঁদের উপর থেকে কেন্দ্রীয় ‘মগজ ধোলাইয়ের’ প্রভাব কাটাতেই এই বন্দোবস্ত। আবার দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যে পুরস্কার চালু করেছেন, নবান্নের অনুমতি না-নিয়ে তার জন্য প্রার্থী হয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের রোষের মুখে পড়েছেন দুই জেলাশাসক। প্রশাসনের একাংশের মতে, ডব্লিউবিসিএসদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ‘নির্দেশে’ সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রইল। তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অফিসারদের কাজের প্রশংসাও করেছেন। ‘‘রাজ্যের যত কিছু ভাল ও জনমুখী কাজ, তা তো আপনারাই করছেন। আপনারাই সরকারের মুখ।’’— বলেছেন তিনি।