মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে ‘পরিবর্তন’-এর ভরকেন্দ্র নন্দীগ্রামেই বৃহস্পতিবার জোড়া ‘হোঁচট’ খেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভরা প্রশাসনিক বৈঠকে বসে তাঁকে শুনতে হল, সেখানে তৈরি সরকারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কোনওরকম ব্যবস্থাই নেই। জামি আন্দোলনে নিখোঁজদের সন্ধানেও যথেষ্ট উদ্যোগী নয় সিআইডি।
সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নিয়ে তাঁর অভিযোগের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য সচিব যে ‘তথ্য’ দিলেন, তা মুখের উপর নস্যাৎ করে দেন তৃণমূলেরই জেলা সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালের হাল সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। ওই বৈঠকেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী আরও শুনলেন, জমি আন্দোলনের সময় নিখোঁজ গ্রামবাসীদের সন্ধান পেতে সিআইডি গড়িমসি করছে। উল্লেখ্য স্বাস্থ্য ও পুলিশ— দু’টি দফতরই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে।
এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে অভ্যাসমতোই জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভাব-অভিযোগের কথা জানতে চান। সেই সময়ই নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচিত তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক নেই। অ্যানাস্থেশিয়ার ডাক্তার মেডিসিনের চিকিৎসা করেন।’’ দলের জনপ্রতিনিধির মুখে এ কথা শুনে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে বসা স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চান। স্বাস্থ্য সচিব বিষয়টি মানতে চাননি। তবে নিজের তথ্যে অনড় থেকে সুফিয়ান বলেন, ‘‘উনি ভুল বলছেন।’’ তাতেই বৈঠকের পরিবেশ বদলে যায়। মুখ্যমন্ত্রী সুফিয়ানকে বলেন, ‘‘ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখ। অত তর্ক করবে না। প্রধান সচিব যা বলছেন শোনো।’’ তখন সুফিয়ান বলেন, ‘‘আমি জেনে বলছি। ওখানে আমি থাকি। কিছুই হয় না।’’ মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, ‘‘আমার কাছে যত ডাক্তার আছে তার থেকেই তো দেব।’’ সরকারি সূত্রের খবর, বুধবারই নন্দীগ্রাম হাসপাতালে এক জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
পরে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সময় যাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাঁদের সন্ধানে সিআইডির গড়িমসির বিষয়টি তোলেন স্থানীয় বিধায়ক ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের নিখোঁজদের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছিল সিআইডি। তদন্ত কিছুটা হলেও মাস দু’এক হল তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’ এই অভিযোগ শুনেই পাশে বসা স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। ক্ষোভের সঙ্গেই মমতা জানতে চান, ‘‘কেন করছে না?’’ তার পর বলেন, ‘‘ওদের তো কাজের জন্যই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’