Mamata Banerjee

ফিরল বাঙালি-অবাঙালির রাজনীতি, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে সামনে রেখে বিজেপিকে তোপ মমতার

শুক্রবার দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। তার আগের দিন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে কেন ইডি তল্লাশি! এমন আচরণকে বিজেপির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আক্রমণের অস্ত্র বানালেন মমতা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৪৩
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাঙালি বনাম বহিরাগত’ লড়াই আবার সামনে নিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপলক্ষ— বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। বিজেপিকে ‘রাজনৈতিক বার্তা’ দিতে গিয়ে টেনে আনলেন সাংস্কৃতিক ফারাক। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বাঙালির পুজোর উৎসবের সময় এই ধরনের তল্লাশির ঘটনাকে তিনি ‘বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত’ হিসেবেই দেখছেন। বস্তুত, জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ইডির তল্লাশি প্রসঙ্গে মমতা এবং তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ যে যে পদক্ষেপ করেছেন, তাতে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগের ‘রাজনৈতিক কৌশল’-এর ছায়াই দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

দ্বাদশীতে ইডি-তল্লাশি

মমতা বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় পুজোর কার্নিভাল চলছে। শুক্রবার কলকাতায় কার্নিভাল। পুজোর ঠিক আগে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতেও তল্লাশি করেছিল ইডি।’’ বাংলা এবং বাঙালির প্রধান উৎসবের সময়েই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি এমন আচরণ করছে কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। প্রসঙ্গত, পুজোর কিছুদিন আগে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। মমতা জানান, ফিরহাদের স্ত্রীর পোশাকের হিসাবও তদন্তকারীরা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘিয়ের কৌটো উল্টে দিয়েছে! পোশাকের ছবি তুলেছে! কী যে অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে কহতব্য নয়!”

Advertisement

তল্লাশি বনাম বিজয়া

বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ইডির তল্লাশি চলাকালীনই সেখানে ‘বিজয়ার শুভেচ্ছা’ জানাতে মিষ্টি-হাতে পৌঁছে যান তৃণমূলের নেতাদের কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, বিধাননগরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায় এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রঞ্জন পোদ্দার। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়ায় জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তুলসী অভিযোগ করেন, “আমাদের ঐতিহ্য মেনেই গুরুজনের সঙ্গে বিজয়া করতে এসেছিলাম। কিন্তু এরা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানছে!” একই কথা বলেন রঞ্জনও। সব্যসাচী জানান, তিনি ইডি তল্লাশির কথা জানতেনই না! বাঙালির সংস্কৃতি মেনে দলের সিনিয়র নেতার বাড়িতে বিজয়া করতে এসেছিলেন মিষ্টি নিয়ে। ‘বিজয়া সারতে দেওয়া যাবে না’— এই মর্মে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছ থেকে লিখিত নিষেধাজ্ঞাও দেখতে চান তাঁরা। তবে তেমনকিছু বাহিনী বা ইডি দেখায়নি। তৃণমূল নেতৃত্বকে বাড়িতে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি।

লক্ষ্মীপুজোয় বৈঠক

আগামী শনিবার লক্ষ্মীপুজো। সেই দিনই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক। ওই কমিটির সদস্য তৃণমূলের বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। প্রতিবারই তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘কাকলির বাড়িতে লক্ষ্ণীপুজো। আমি বলেছি, এখানে লক্ষ্ণীপুজো করতে হবে না। দিল্লিতে গিয়ে লক্ষ্ণীপুজো করো। নিজেদর আপত্তিটা নথিভুক্ত করে এসো! এই সব সময়ে কেউ মিটিং ডাকে?’’ প্রসঙ্গত, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়ার তিনটি বিল নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘তৎপরতা’ নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা।

বিশ্বভারতীর ফলক

বিজেপির তরফে বাংলা এবং বাঙালির উপর ‘সাংস্কৃতিক আক্রমণের’ অঙ্গ হিসেবে বিশ্বভারতী প্রসঙ্গও তুলেছেন মমতা। সম্প্রতি বিশ্বভারতীকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তার পরে গত ১৯ অক্টোবর ওই স্বীকৃতির একটি ফলক বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম থাকলেও নেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই এ নিয়ে একের পর এক তৃণমূল নেতা প্রতিবাদ জানিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। এর পরে সরব হন মমতা স্বয়ং। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য। তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। ওঁর নাম সরিয়ে দিয়েছে! পুজো বলে আমরা এটা চুপচাপ হজম করেছিলাম। কাল (শুক্রবার) সকালের মধ্যে ওই ফলক না সরালে এবং রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে না আনলে ওখানে আমাদের লোক রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে।’’

অস্ত্র নতুন নয়

গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে তৃণমূলের প্রধান স্লোগানই ছিল ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। তারই উল্টোপিঠে বিজেপির গায়ে বারবার ‘বহিরাগত’ তকমা লাগিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির পাল্টা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তৈরি করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসাবে বাঙালির প্রিয় পার্বণ ‘পয়লা বৈশাখ’ দিনটিকে বাছা হয়েছে। রাজ্য সঙ্গীত হিসাবেও বাছা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি।

এ বার বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সময়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশির প্রতিবাদকেও মমতা মেশালেন বাংলার আবেগের সঙ্গে। অনেকে মনে করছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ‘বাঙালি বনাম বহিরাগত’ লড়াইয়ের নান্দীমুখও দুর্গাপুজোর দ্বাদশী তিথিতে করে দিলেন মমতা। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘বাঙালি সংস্কৃতিতে এই সময়টা অসুরদলনের বিজয় উৎসব পালনের সময়। বাংলার দুর্নীতি-অসুর বিনাশের কাজকে বাঙালি স্বাগত জানাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী কান পাতলেই তা শুনতে পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন