বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার শাসক এবং বিরোধী পক্ষের নজিরবিহীন তরজা দেখল রাজ্য বিধানসভা। একে অপরকে চোর সম্বোধনে বিঁধলেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘চোর’, ‘ডাকাত’ এবং ‘লুটেরা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা তাঁকে ও তাঁর দলকে ‘চাকরি চোর’, ‘বালি চোর’, ‘কয়লা চোর’ বলে আক্রমণ করে বিজেপি।
বাংলা ভাষা ও বাঙালি নিয়ে আলোচনায় বিরোধীদের বাধা পেয়ে বৃহস্পতিবার গোড়া থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা ‘চোর’ স্লোগান দিতে থাকলে এক সময়ে দলীয় মন্ত্রী, বিধায়কদের গলা মেলাতে ইশারা করেন তিনি। বিজেপির বিধায়কদের স্লোগান ছিল, ‘চাকরি চোর, গদি ছোড়’। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা মোদী চোর বলছেন? দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমরা চোর বলি না, তাঁর পদের সম্মান আছে। মোদীকে বলব, আপনাদের দল থেকে বার করে দিতে!’’ তার পরে এক সময়ে নিজেই উত্তেজিত হয়ে স্লোগানের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মোদী চোর, বিজেপি চোর! অমিত শাহ চোর, বিজেপি চোর!’’ সভায় বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। নিলম্বিত হওয়া বিজেপি বিধায়কেরা হলেন শঙ্কর ঘোষ, মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা, বঙ্কিম ঘোষ এবং অগ্নিমিত্রা পাল।
স্পিকার বলেন, ‘‘আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) যা বলেছেন, ওঁরা (বিজেপি বিধায়কেরা) কানে লাগিয়ে সব শুনেছেন। এটা আমার নিজস্ব মতামত।’’ শেষ হল বিধানসভার অধিবেশন।
মমতা বলেন, ‘‘অশুভ শক্তির মতো, দৈত্য রাবণের মতো আচরণ করছিল।’’
মমতা বিজেপির উদ্দেশে করে বললেন, ‘‘আপনারা বাংলাবিরোধী। আমরা কোনও ভাষার বিরোধী নই। জয় বাংলা।’’ মমতার বক্তব্য শেষ হতেই ওয়াক আউট বিজেপি বিধায়কদের।
মমতা বলেন, ‘‘২০২৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা থেকে যাবেন, তাঁদের রেশন, নাগরিকত্ব, সাংবিধানিক অধিকার দেবেন তো?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নাগরিক অধিকার কাড়তে দেব না। রামকৃষ্ণ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন, তার থেকে এক পা-ও সরব না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রস্তাবকরণের অনুরোধ করব। যাঁরা করবেন না, তাঁরাবাংলা বিরোধী। যাঁরা ক্যা ক্যা করে চিৎকার করে, কাউকে নাগরিকত্ব দেয়নি। ডবল স্ট্যান্ডার্ড গেম। কোচবিহারের রাজবংশী ভাই কেন গ্রেফতার হলেন। কেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর অত্যাচার হল। ’’
বিধানসভায় একের পর এক স্লোগান তুলে চলেছেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের নিশানায় মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি বিধায়কেরা বলেন, ‘‘জেনে গিয়েছে জনতা, আসল চোর মমতা।’’
মমতা বলেন, ‘‘আপনারা (বিজেপি) ক্ষমতায় থাকলে জনগণমন জাতীয় সঙ্গীত হত না। বাংলা বললেই দেশবিরোধী বলছেন! মানুষ ক্ষমা করবে না। ’’
বিশ্বনাথ কারক কথা বলতে গিয়েছেন স্পিকারের সঙ্গে। বিজেপি বিধায়কেরা স্লোগান দেন, ‘চাকরি চোর গদি ছোড়’। মমতা বলেন, ‘‘মোদী চোর গদি ছোড় আপনারাই বলছেন। আমি কোনও ভাষাকে অপমান করতে পারি না এঁরা যে আচরণ করলেন, তা বিধানসভার ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায়।’’
বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষকে সাসপেন্ড করা হল বিধানসভা থেকে।
এ বার অশোক ডিন্ডাকে সাসপেন্ড করা হল। স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে গেলেন ডিন্ডা। স্পিকার বলেন, ‘‘অশোক ডিন্ডা আপনি দাঁড়িয়ে যে আচরণ করছেন, তা নিন্দনীয়।’’
মিহির গোস্বামীকে সাসপেন্ড করা হল। মার্শাল দিয়ে বার করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি অধিবেশন ছেড়ে যেতে নারাজ। পাঁজাকোলা করে মিহিরকে বার করে দেওয়া হল।
তৃণমূলের বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে আসনে বসতে বললেন মমতা। হুমায়ুন কবীরকে মমতার ধমক। নির্মল ঘোষকেও ধমক দিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কথা বলতে না দিলে আমি স্পিকারকে বলব সাসপেন্ড করতে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমাদের কেউ থাকবে না ওয়েলে। থাকলে আমি বলব স্পিকারকে সাসপেন্ড করতে। শৃঙ্খলাবদ্ধ হও। যাঁরা বসবেন না, হাউস চলতে দেবেন না, সকলকে সাসপেন্ড করুন।’’
মিহির গোস্বামীকে সতর্ক করলেন স্পিকার। স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা। পাল্টা স্লোগান তৃণমূলের।
মমতা বলেন, ‘‘বিমা থেকে জিএসটি বাদ দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তা করতে বাধ্য হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিজেপির যাওয়ার সময় তো হয়ে এল। দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। বিজেপি চোর না ডাকু, ডাকাত।’’
মমতা বলেন, ‘‘মোদীকে চোর বলবেন না। শেম অন ইউ। আপনারা নিজেদের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলছেন। নিজের নেতাকে চোর বলছেন। আমি মোদীজিকে বলব আপনাদের দল থেকে তাড়িয়ে দিতে। আপনাদের স্লোগান শুনে মনে হচ্ছে মোদীকে চোর বলছেন। এটা শুনতে আমার ভাল লাগছে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি বিধানসভার সদস্য। আমার বলার অধিকার রয়েছে। আমি বলবই।’’ নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আজ রাশিয়া, চিন, আমেরিকা , ইজ়রায়েলের পায়ে পড়েছেন। দেশটার সম্মান নষ্ট করছেন। এরা কী দেশ চালাবে! বিভেদের, চক্রান্তের রাজনীতি করে। আপনারা ইংরেজদের সঙ্গে চক্রান্ত করে বাংলা আর ভারত ভাগ করেছিলেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘যাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁরাও তৃণমূল করতেন। ইডি সিবিআই থেকে বাঁচতে, টাকা বাঁচাতে বিজেপিতে গিয়েছেন। ’’