পথে: ডাউহিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
গত বছর কালিম্পঙে প্রশাসনিক বৈঠকের সময়ে উন্নয়ন বোর্ডগুলিকে প্রথম ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, যে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা কী ভাবে খরচ করা হয়, তার জন্য অডিট করা হবে। তার পরে সোয়া এক বছর কেটে গিয়েছে। তিস্তা, মহানন্দা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। লোকসভা, বিধানসভা ভোটে পাহাড়ে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। এ বারে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে ফের বোর্ডগুলির খরচ নিয়ে অডিটের প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে গোড়া থেকেই নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বোর্ডগুলি থেকে অনীত থাপা, বিধায়ক, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা, বাদ যাননি কেউই। উন্নয়ন বোর্ডগুলি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এত দিন যে খরচ করেছে বোর্ডগুলি, তার সমীক্ষা এবং অডিট হবে।’’ পরে আর একটি প্রসঙ্গে তিনি জানান, অনেক টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
পাহাড়ে তৃণমূল বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, বোর্ডগুলি দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক তৈরির যে চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, সেটা ব্যর্থ হয়েছে। তাতেই বোর্ডগুলির উপরে চাপ বাড়াতে চাইছেন মমতা। পাহাড়ে মোট ১৫টি উন্নয়ন বোর্ড রয়েছে। বোর্ড প্রতিনিধিরা কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠমহলে তার কোনও কোনও সদস্য জানান, ভোটব্যাঙ্ক পরিচালনা করা সহজ নয়।
পাহাড়ের লোকজনের অবশ্য দাবি, বোর্ডগুলির মধ্যে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর মে মাসে প্রশাসনিক বৈঠকের সময়েও সেই অভিযোগ ওঠে। এ বারেও একই প্রসঙ্গে অভিযোগ এসেছে মুখ্যমন্ত্রী কাছে। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাহাড়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই বোর্ড গঠনকে অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। এর আগে লোকসভা ভোট প্রচারের সময়েও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের অভিযোগ ছিল, এই ভাবে পাহাড়কে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে এসেই বলেছিলেন, ‘‘কলকাতায় কি এই ভাবে বন্দ্যোপাধ্যায় বোর্ড, মুখোপাধ্যায় বোর্ড করা হয়? তা হলে পাহাড়ে এই ভাবে সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বোর্ড ভাগ করা হবে কেন?’’
এ দিন বোর্ডের কেউই এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। একই ভাবে মুখে কুলুপ আঁটেন উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব প্রমুখ। সকলেরই বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা মেনেই প্রশাসন চলবে। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে মাসে যে অডিটের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তার পরে কিন্তু সেই বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে বিশেষ কাজ কিছু হয়নি।