Cobas 8800

রাজ্যে কোভিড নমুনা পরীক্ষার সংজ্ঞা-সংখ্যায় বদল আনবে ‘কোবাস ৮৮০০’

নাইসেড অধিকর্ত্রী শান্তা দত্তের মতে, অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোবাস-কে কাজে লাগানো যাবে।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৪
Share:

‘কোবাস ৮৮০০’।

বঙ্গে কোভিড নমুনা পরীক্ষার সংজ্ঞা এবং সংখ্যায় বদল আনতে চলেছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ‘কোবাস ৮৮০০’।

Advertisement

সোমবার পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় দিনে তিন হাজার নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভিডিয়ো কনফারেন্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ রাজ্যে কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর-নাইসেডের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস) বায়োসেফটি লেভেল ২ ল্যাবে বসেছে যন্ত্রটি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, ‘‘নাইসেড এই যন্ত্র পাওয়ায় রাজ্যের সুবিধা হবে ঠিকই। কিন্তু রাজ্য সরকারের ল্যাবরেটরিতেও এমন একটি যন্ত্র পেলে ভাল হবে।’’

এ দিনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান, সে রাজ্যে প্রতি দিন আরটি-পিসিআরে শুধু ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। প্রতি দিন র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হচ্ছে ৫৬ হাজার। মহারাষ্ট্রে প্রতি দিন গড় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। বঙ্গে তা ১৬ হাজার। এই ছবিতে বদল ঘটানোর প্রশ্নে ‘কোবাস’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে আশাবাদী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নাইসেড অধিকর্ত্রী শান্তা দত্তের মতে, অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোবাস-কে কাজে লাগানো যাবে।

Advertisement

এক নজরে কোবাস

• করোনা নমুনা পরীক্ষাকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এক সুতোর মধ্যে গেঁথে ফেলার নাম কোবাস ৮৮০০।

• প্রতিদিন ৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম।

• চার ধাপে বিভক্ত যন্ত্র। প্রথম ধাপ ‘স্যাম্পল লোডিং মডিউল’। এখানে নমুনার নির্দিষ্ট অংশ টিউবে ভরে দেবেন পিপিই পরিহিত ল্যাবকর্মী। দ্বিতীয় ধাপ ‘স্যাম্পল লোডিং মডিউল’-এ নমুনা একটি প্লেটে স্থানান্তর হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আরএনএ নির্গত করে রিএজেন্ট মিশিয়ে নমুনাকে পরীক্ষার উপযোগী করে ‘স্যাম্পল প্রসেসিং’ ইউনিট। ‘অ্যানালিটিক ইউনিটে’ নির্ণয় হয় নমুনা পজ়িটিভ না নেগেটিভ।

• ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, জিকা ভাইরাস-সহ একাধিক রোগের পরীক্ষাও এই যন্ত্রে সম্ভব।

• ল্যাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। পরীক্ষার জন্য খুব বেশি লোকবলের প্রয়োজন নেই।

নমুনা পরীক্ষা কী ভাবে বদলে দেবে কোবাস? শান্তা জানান, বর্তমানে নমুনা আসার পরে প্রথমে তাকে নির্দিষ্ট চিহ্নিতকরণ নম্বর বা আইডি দেওয়া হয়। পরবর্তী ধাপে সংগৃহীত নমুনার নির্দিষ্ট অংশ টিউবে ভরে তা থেকে আরএনএ নির্গত করার প্রক্রিয়া। এর পর আরএনএ-র সঙ্গে রিএজেন্ট মিশিয়ে তা পিসিআরে পরীক্ষার জন্য বসানো হয়। পরীক্ষার ফল ‘রিড’ করে বুঝতে হয় সেটি পজ়িটিভ নাকি নেগেটিভ। তবে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ফলাফল নথিভুক্ত না-করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় না। শান্তা জানান, তুলনামূলক ভাবে কম কর্মীর সাহায্যেই কোবাসে প্রক্রিয়াটি করা যাবে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে সরানো হল

ছ’কোটি টাকার বিদেশি যন্ত্রটির চারটি ভাগ— স্যাম্পল লোডিং, স্যাম্পল ট্রান্সফার, স্যাম্পল প্রসেসিং ও অ্যানালিটিক ইউনিট। শান্তা জানান, অত্যাধুনিক ‘পাস বক্সের’ মাধ্যমে নমুনা স্বয়ংক্রিয় ভাবে ‘বায়োসেফটি লেভেল ২’ ল্যাবে চলে আসবে। আগের মতো কাউকে নমুনা ল্যাবে ঢুকে পৌঁছে দিতে হবে না। পিপিই পরিহিত ল্যাবকর্মী ‘রিসিভিং কাউন্টার’ থেকে ‘পাস বক্সের’ (একটি যন্ত্র) মাধ্যমে আসা নমুনা ৬০০ মাইক্রো মিলিমিটার একটি টিউবে ভরে তা ‘স্যাম্পল লোডিং মডিউল’এ দেবেন। প্রতি বার ২২৫টি টিউব বসানো যাবে। ‘স্যাম্পল লোডিং মডিউল’ থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নমুনা ‘স্যাম্পল ট্রান্সফার মডিউলে’ পৌঁছবে। এই ভাগে টিউবের মধ্যে থাকা নমুনা একটি প্লেটে স্থানান্তর হবে। পরবর্তী ধাপ ‘স্যাম্পল প্রসেসিং’। নমুনা থেকে আরএনএ নির্গত করে তাতে প্রয়োজনীয় সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এখানেই নমুনা পিসিআরের উপযোগী হয়ে ওঠে। পরের ধাপে ‘অ্যানালিটিক ইউনিট’-এ চারটে পিসিআর রয়েছে। সেখানে নমুনা পরীক্ষিত হওয়ার পরে একটি ইউজার-ডিসপ্লে রয়েছে। আইডি অনুযায়ী কোনটি পজ়িটিভ না নেগেটিভ, তা সেই পর্দায় ভেসে উঠবে।

শান্তা বলেন, ‘‘নতুন যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যেমন মিলবে তেমন সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও কম। ল্যাবে ঢোকা ও বেরোনোর পথ আলাদা। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন