ছাত্র ভর্তিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের লোকজন। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী দু’জনেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহু কলেজে ব্যানার লাগানো হয়েছে, ভর্তি হতে গিয়ে কেউ টাকা চাইলে যেন সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করা হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের চাঁদা তুলে গরিব পরিবারের দুই পড়ুয়াকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে নজর কেড়েছে ওই এলাকার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা। তাঁদের উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামিম ভড় বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের এই প্রচেষ্টা আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা ওদের পাশে আছি।’’
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর এই কলেজে এগারোশোর বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। এ বার এখনও পর্যন্ত প্রায় সাতশো পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি বাবদ লাগছে ১৭২০ টাকা। অনার্সে ১৮৭০ টাকা।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, এমনকী দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে আসেন। বেশির ভাগই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। কারও বাবা ইটভাটায় কাজ করেন, কেউ ছোট চাষি।
কেউ আবার জঙ্গলে কাঠ কুড়িয়ে, মাছ ধরে সংসার চালান। কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে বহু পরিবারই সমস্যায় পড়েন। তাঁদের কথা ভেবেই চাঁদা তোলার এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন ছাত্রেরা। কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক, এলাকার মানুষজনের কাছে কৌটো হাতে চাঁদা তুলছেন কিছু ছাত্রছাত্রী।
কলেজে গিয়ে দেখা গেল, কৌটো ঝাঁকিয়ে চাঁদা তুলছেন সানি মল্লিক, মেঘা পারভিনরা। তাঁদের কথায়, ‘‘একজনও যাতে টাকার অভাবে ভর্তি হতে এসে ফিরে না যায়, সে জন্যই চাঁদা তোলা হচ্ছে। হাজার পাঁচেক টাকা উঠেছে। দু’জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আরও টাকা তোলা হবে।’’ হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘আমরা চাই রাজ্যের সব কলেজে ছাত্র সংসদ এমন দৃষ্টান্ত তুলে ধরুক।’’
ছাত্র সংগঠনের আর্থিক সাহায্যে কলেজে ভর্তি হয়েছেন হাসনাবাদের তাড়াগোপাল গ্রামের বাসিন্দা শাবানা খাতুন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা খুব গরিব। বাবা মিস্ত্রির কাজ করেন। কোনও রকমে সংসার চলে। কী ভাবে কলেজে ভর্তির ফি জোগাড় করব, তা যখন ভেবে পাচ্ছিলাম না, সে সময়ে সহপাঠীরা এগিয়ে আসে।’’ উত্তর বোলতলা গ্রামের পূজা বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাবা ইটভাটায় কাজ করেন।
সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কলেজের ছেলেমেয়েরা চাঁদা তুলে আমাকে ভর্তি করিয়েছে। তা না হলে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হত না।’’