কুকথায় দিলীপের নামে মামলা, আরও হুমকি

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে রবিবার এক হাত নিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share:

—ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে রবিবার এক হাত নিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে কার্যত ‘গুন্ডা ঘোষ’ আখ্যা দিয়ে এ-ও বলেছিলেন, দিলীপবাবুর কুকথায় ক্ষেপে গিয়ে মানুষ যদি কিছু করে বসেন, তার দায় কিন্তু তৃণমূল নেবে না। সোমবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নুরুর রহমান বরকতি। তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি এবং রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লাকে পাশে নিয়ে বসে বরকতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যে কুরুচিকর মন্তব্য দিলীপ ঘোষ করেছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দেশের সব মহিলাই অসম্মানিত। দিলীপবাবুর এই অভব্য আচরণের জন্য তাঁকে পাথর মেরে বাংলা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ফতোয়া দিচ্ছি।’’ বরকতি দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের সব নেতা ও সংখ্যালঘু নেতারা আমার সঙ্গে আছেন।’’

Advertisement

যদিও বরকতি সাহেবের এই বক্তব্য যে তৃণমূলের দলগত অবস্থান নয় তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সহ সভাপতি মুকুল রায়। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীদের মধ্যে থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি তিনিও।

বস্তুত, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে আক্রমণ কেবল মৌখিক স্তরেই আটকে নেই। এ দিন তা আইনের দরজায়ও গড়িয়েছে। দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে প্রাক্তন বিজেপি নেতা এবং অধুনা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির তরফে। তাঁর এও অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আশালীন মন্তব্য করায় আপত্তি জানালে তাঁকে বন্দুক দেখিয়ে শাসানি দেয় দিলীপ অনুগামীরা। এরই ভিত্তিতে রাজনৈতিক উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এবং অস্ত্র আইনে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

Advertisement

দিলীপবাবুর কুকথার নজির অবশ্য নতুন নয়। এর আগে দেশপ্রেম বিতর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক এবং পড়ুয়াদের সম্পর্কে বহু বার কটূক্তি করে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার তাঁর মন্তব্যে চটেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, এ হেন ভাষা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। এ ধরনের কথা বলে আসলে রাজ্যের সংস্কৃতিকে দূষিত করছেন দিলীপবাবু। এতে বাংলার মানহানি হচ্ছে। মমতার এই মনোভাব জেনেই তৃণমূল নেতারা এ বার আরও সক্রিয় হয়ে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, বিভিন্ন জেলার বহু থানাতেই দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করবেন তৃণমূল কর্মীরা। এত সমালোচনা সত্ত্বেও দিলীপ অবশ্য দমবার পাত্র নন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক হুমকি দিয়েছিলেন, দিলীপবাবু উত্তর ২৪ পরগনায় ঢুকলে তাঁকে ‘উত্তমমধ্যম’ দেওয়া হবে। তার জবাবে এ দিন সারা দিন ওই জেলাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন দিলীপবাবু। বসিরহাটে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। দলীয় কর্মীদের উপর তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় গিয়েছেন নিমতা থানাতেও। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘বালুদার হুমকিতে আমি ভয় পাই না। আমি জঙ্গলমহলের ছেলে। অনেক গুলি-বন্দুক দেখেছি। নিজে ক্যারাটে এবং লাঠি খেলা শিখেছি। তাই দু’চারটে গরুপাচারকারীকে দিয়ে আমাকে চমকে কিংবা হুমকি দিয়ে বিশেষ সুবিধা হবে না।’’ খাদ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, দিলীপবাবু যে এ দিন গোটা জেলা চষে গেলেন, তৃণমূল তো বিক্ষোভ দেখাল না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘উনি লুকিয়ে এসেছিলেন, লুকিয়েই চলে গিয়েছেন!’’

প্রশ্ন হল, দিলীপবাবু কেন বার বার কুরুচিকর মন্তব্য করছেন? বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘যস্মিন দেশে যদাচার! মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটু কথা বলেন। তাঁকে কোমরে দড়ি পরানোর হুমকি দেন। তাই এখন শঠে শাঠ্যং হচ্ছে।’’ এবং শঠে শাঠ্যংয়েই লাভের অঙ্ক দেখছে বিজেপি। তাই এ দিন বরকতিকে পাল্টা হুমকি দিতেও ছাড়েননি বিজেপি নেতারা। দলের কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাহস থাকলে উনি পাথর মেরে দেখান! তখনই টের পাবেন, এটা পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নয়। এটা ভারত। এখানে পাথর ছো়ড়ার সংস্কৃতি চলে না।’’ তবে বামপন্থী মহলের মতে, বিজেপি-তৃণমূল সুচিন্তিত ভাবেই এই কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। ওদের লক্ষ্য রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো। তৃণমূল হয়তো মনে করছে, এর ফলে বিজেপি-র ভোট আরও বাড়বে। রাজ্যে আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে বাম-কংগ্রেস। আর বিরোধী ভোটের সেই ভাগাভাগিতে লাভ হবে তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন