সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রকাশ কারাট।
দু’জনেই নিজেদের অবস্থানে অনড়। দুই কমিউনিস্ট নেতার লড়াই এ বার কলকাতার মাঠে।
সিপিএমের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাটের মধ্যে পলিটব্যুরোর বৈঠকে কোনও ঐকমত্য হল না। দু’দিনের পলিটব্যুরো বৈঠকের আজ শেষ দিনে উভয়েই নিজেদের রাজনৈতিক লাইনের খসড়া দলিল পেশ করেছিলেন। এই দু’টি দলিল নিয়েই আগামী ১৯-২১ জানুয়ারি কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিতর্ক হবে।
কারাট শিবির অবশ্য দাবি করছে, দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের দলিলকেই পলিটব্যুরোর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সমর্থন জানিয়েছেন। ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হলেও তিনি এখানে সংখ্যালঘু। তাঁর দলিল নিছক ‘ভিন্ন মত’ হিসেবে পেশ হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির শেষ বৈঠকেও ইয়েচুরির মত সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পায়নি। তিনি বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস ও অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, যেটি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেরও মত। এখন ইয়েচুরি নিজের অবস্থান নরম করে মত দিয়েছেন— ‘বুর্জোয়া’ অর্থাৎ কংগ্রেস বা আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে কোনও নির্বাচনী জোটে সিপিএম যাবে না। কিন্তু শেষ পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়েছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া না হওয়ার বিষয়টি বদল হোক।
ইয়েচুরির যুক্তি, জোট না হলেও প্রয়োজনে আঁতাত বা বোঝাপড়ার রাস্তা খোলা রাখা হোক। যেমন গুজরাতে দু-একটি আসনে কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য সিপিএম সেই সব আসনে প্রার্থী দেয়নি। উল্টো দিকে কারাটের দাবি, আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট হতে পারে। সেই দলগুলি আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের ছায়া মাড়াবে না সিপিএম। এটি ‘মূর্খতা’ ও ‘বাস্তবে অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইয়েচুরি। দৃষ্টান্ত হিসেবে ইয়েচুরির যুক্তি, চেন্নাইয়ের আর কে নগর উপনির্বাচনে ডিএমকে-কে সমর্থন করছে সিপিএম। আবার কংগ্রেসও ডিএমকে-কে সমর্থন করছে। ফলে সিপিএমকে কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে যেতেই হবে।
মজার বিষয় হল, কারাট ও ইয়েচুরি দু’জনেই মনে করেন, বিজেপি তথা আরএসএসকে হারানোই বামেদের প্রধান লক্ষ্য। দু’জনের কৌশলের মধ্যে বিশেষ ফারাকও নেই। তা সত্ত্বেও এই বিবাদ বস্তুত দুই পুরনো বন্ধুর ‘ইগো’র লড়াই বলে মনে করছেন দলের অনেকে। অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি এখন হাস্যকর পর্যায়ে চলে গিয়েছে। নিজেদের মধ্যে লড়াই করে যে শক্তি ও সময় অপচয় করা হচ্ছে, মাঠে নেমে সেটি ব্যয় করলে বরং দলের লাভ হত।
যদিও ঠিক হয়েছে, কলকাতার বৈঠকে যাতে দু’টির বদলে একটি নথিই পেশ করা যায়, তার জন্য দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরোর সদস্যরা আর একবার ‘শেষ’ চেষ্টা করবেন। পলিটব্যুরো আজ বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, আগামী ১৮-২২ এপ্রিল হায়দরাবাদে পার্টি কংগ্রেস হবে। তার আগে রাজ্য কমিটিগুলির সম্মেলনের দিনক্ষণও আজ চূড়ান্ত হয়েছে।