রানাঘাটে রাহুল। নিজস্ব চিত্র
তিনি সোয়াইন ফ্লু নিয়ে নয়াদিল্লির এইমসে ভর্তি। কিন্তু বিজেপি সভাপতি সেই অমিত শাহই আগামী ২২ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে জনসভা করবেন বলে দাবি করলেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে ওই সভা হবে বলে ঠিক হলেও প্রয়োজনীয় অনুমোদন এখনও বিজেপির হাতে আসেনি। অনুমতি চেয়ে কলকাতায় বিকাশ ভবনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রানাঘাট কোর্ট মোড়ের কাছে দলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাহুল। সঙ্গে ছিলেন জেলার পর্যবেক্ষক সঞ্জয় সিংহ। নদিয়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ উত্তর ও দক্ষিণ, বারাসত, বসিরহাট এবং ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও বিভিন্ন মোর্চার সভাপতিরা জড়ো হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে কমবেশি আড়াইশো জন।
বিজেপি নদিয়া দক্ষিণ জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে পাশে বসিয়ে রাহুল দাবি করেন, “আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আমরা রাজ্যের বেশ কয়েকটি আসনে জিতব। তার মধ্যে কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রও রয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি সভাপতি অমিত শাহ কৃষ্ণনগরে আসবেন। ঐতিহাসিক সভা হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় সভা করবেন। সেই দু’টি সভা সফল করতেই আজকের সভা।”
তবে কৃষ্ণনগরের জনসভা কতটা ‘সফল’ হবে তা নিয়ে দলের কর্মীদেরই একাংশ সন্দিহান। কেননা অমিত শাহ দু’এক দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এত দূরে এসে জনসভা করতে পারবেন কি না, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, যে ভাবে রাজ্যের বাধায় রথযাত্রা ভেস্তে গিয়েছে, সভা করার অনুমোদন শেষ পর্যন্ত মিলবে কি না, তা-ও তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না।
তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি এবং রথযাত্রা পণ্ড হওয়ার পরে নিচুতলার কর্মীরা কিছুটা ভেঙে পড়েছেন বুঝে তাঁদের উজ্জীবিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। নদিয়ার দু’টি আসন তাঁরাই পাবেন বলে বারবার কর্মীদের আশ্বাস দিচ্ছেন তাঁরা। যদিও রানাঘাট কেন্দ্রের হবিবপুর, চাকদহ, শান্তিপুরে ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কয়েক জন সদস্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। এতে তো দল শক্তি হারাচ্ছে?
রাহুলের দাবি, ‘‘ওঁরা সবাই দলে ফিরে আসছেন। এমনকি তৃণমূলের সদস্যেরাও আমাদের দলে চলে আসবেন। পরিস্থিতি বুঝে অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। ওরা বুঝতে পেরেছে, মানুষ ওদের পাশে নেই।”
এর আগে, ১১ জানুয়ারি মোদী কৃষ্ণনগরে এসে জনসভা করবেন বলে জেলা বিজেপি নেতারা দাবি করলেও তা হয়নি। অমিত শাহের সভা হবে তো? তার প্রস্তুতি কত দূর? দলের নদিয়া উত্তর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি মহাদের সরকার বলেন, “২২ জানুয়ারি সভা হবেই। কৃষ্ণনগর কলেজ মাঠে সভা করার জন্য বুধবার অনুমোদন চেয়ে বিকাশ ভবনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই কাজ শুরু করা হবে।” ঘটনাচক্রে, গত সপ্তাহে ওই মাঠের জনসভা থেকেই মোদীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প থেকে রাজ্যের বেরিয়ে আসার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
হাতে মাত্র আর পাঁচ দিন। মধ্যে শনি আর রবিবার ছুটি। ফলে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা। দলীয় সূত্রের খবর, অমিত শাহ যদি আসতে না-ও পারেন, কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে এনে সভা করা হবে। কিন্তু এক কর্মীর কথায় স্পষ্ট দ্বিধা, ‘‘অমিত শাহ আসবেন বলে প্রচার করার পরে না এলে কর্মীদের কাছে ভাল বার্তা পৌঁছবে না।’’ আর অনুমোদনই যদি না মেলে? মহাদেব বলেন, ‘‘কলেজ মাঠ যদি না পাই, আমরা অন্য কোনও মাঠে চেষ্টা করব। কোনও মাঠেই যদি সভা করার অনুমোদন না দেওয়া হয়, আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’