রাজ্যে সব স্তরের স্কুলেই শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন মার খাচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ। স্কুলশিক্ষা দফতর তার মধ্যেই সব ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের উদ্বৃত্ত শিক্ষকের তালিকা তলব করায় প্রশ্ন যেমন উঠছে, সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তিরও।
‘উদ্বৃত্ত’ শিক্ষক বাছাইয়ের জন্য দফতর থেকে যে-মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, মূলত সেটিকে ঘিরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে শিক্ষা মহলে। তাদের আশঙ্কা, ওই মাপকাঠি মানতে গেলে স্কুলে স্কুলে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এর ফলে যে শিক্ষা দফতরেরই ‘স্টাফ প্যাটার্ন’ পুরোপুরি অমান্য করা হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন বিকাশ ভবনের কর্তারাও।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের স্কুলের উদ্বৃত্ত শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে যে-নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, মাপকাঠি দেওয়া হয়েছে তাতেই। ৫০ জন পড়ুয়া আছে, এমন স্কুলগুলিকে ‘ডিরিকগনাইজ’ অর্থাৎ অবলুপ্ত করার বা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। আর যে-সব স্কুলে ১০০ থেকে ২৫০ জন পড়ুয়া আছে, সেখানে প্রধান শিক্ষকের পদ লুপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকের সংখ্যা যথাক্রমে পাঁচ এবং সাত জনে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ওই শিক্ষকদের রেখে বাকি শিক্ষকদেরই উদ্বৃত্ত হিসেবে দেখাতে হবে— মাপকাঠি এটাই।
এই মাপকাঠির নির্দেশ পেয়ে হতবাক হয়ে গিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা। বিকাশ ভবনের একাংশ জানাচ্ছে, শিক্ষা দফতরের স্টাফ প্যাটার্ন-এ বলা আছে: উচ্চ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ করতেই হবে। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত হওয়ার কথা ৩৫:১। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে মাধ্যমিক স্তরে ৩০:১ অনুপাত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতর থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, ৪০:১ অনুপাত ধরে উদ্বৃত্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা তৈরি করতে হবে।
এমনিতে কমপক্ষে এক জন প্রধান শিক্ষক, বিজ্ঞান ও ভাষা পড়ানোর জন্য সাত জন, কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষা, ইতিহাস এবং ভূগোলের জন্য চার জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা পাঁচে বা সাতে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। এতেই সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে শিক্ষা মহলের আশঙ্কা। কারণ, বিজ্ঞান, ভাষা বা ইতিহাস-ভূগোলের মতো বিষয়ের শিক্ষককেই ছাঁটতে হবে। তাতে বঞ্চিত হবে পড়ুয়ারা।
‘‘প্রাথমিকে পৃথক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দরকার। সেখানে ছাঁটাই করার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই,’’ বলছেন স্কুলশিক্ষা দফতরেরই এক কর্তা।
গত অগস্টেই এই ব্যাপারে প্রথম নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বহু ডিআই এখনও সেই তালিকা পাঠাতে পারেননি। তাই আবার সেই তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
‘‘এই পদ্ধতি চালু হলে স্কুলের বুনিয়াদ ভেঙে পড়বে। এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে গিয়ে রাজ্য সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণে উৎসাহ জোগাচ্ছে,’’ অভিযোগ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের।