কর্মিসভায় অধীর। — নিজস্ব চিত্র
একে একে উঠে দাঁড়িয়ে ওঁরা বলছিলেন— শাসক দলের ‘অত্যাচার’ কিংবা দল বদলানোর জন্য ‘টোপ’-এর দীর্ঘ সব কাহিনি।
তার মাঝেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। জানাচ্ছেন, “তৃণমূলের এই অত্যাচারটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। মনে রাখবেন, দল বদলের ছুতো হিসাবেও অনেকে এই কারণগুলোকে সামনে তুলে আনার চেষ্টা করছেন।”
নদিয়ায় কর্মী সম্মেলনে গিয়ে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীকে সোমবার এ কথাও শুনতে হল। এবং জেলা কংগ্রেস কর্মীদের অনেকেই আড়ালে মেনে নিচ্ছেন, আসল কারণ এটাই। তাঁদের ভরসা জোগাতে গিয়েঅধীরের গলাতেও খুঁজে পাওয়া গেল না সেই মরিয়া মেজাজ।
নদিয়ায় জেলা সম্মেলন করতে চেয়ে শনিবারই জেলা সভাপতিকে ফোন করেছিলেন অধীর। এক দিনের প্রস্তুতিতে এই সভা। অনেকেই আসেননি সময়ে। যাঁরা দেরি এলেন, কর্মীদের অনেকেই তাঁদের দিকেও বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন— এই সন্দেহের পরিবেশেই উঠে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণনগর শহর সভাপতি দিব্যেন্দু বসু দেগে বললেন তোপ— ‘‘তৃণমূলের এই আক্রমণ, অত্যাচার বা টোপের কথা বলে আনেকে আসলে তৃণমূলে যাওয়ার যুক্তি তৈরি করছেন। তৃণমূল অত্যাচার করছে এটাও ষেমন সত্যি তেমনই অনেকেই পা বাড়িয়ে রয়েছে সেটাও সমান সত্যি। এই অবস্থায় আমাদেরই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।”
একে একে সকলের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে মাইক তুলে নেন অধীর। এমনিতেই বর্ষা থেমে গেলেও তখনও আবহাওয়া ছিল ভিজে ভিজে। পাক্কা দুটো নাগাদ সভাস্থলে চলে এসেছেন তিনি। সামনে তখন খুব বেশি বলে কর্মীর ভিড় নেই। এরই মধ্যে মালদহে দলের বিপর্যয়ের কথাও পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাছে। মঞ্চে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বসলেন চেয়ারে। কিন্তু কোথায় সেই রবীন হুড মার্কা ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’? বরং কিছুটা যেন ম্রিয়মান মনে হল আগাগোড়া।
বরং মুর্শিদাবাদের পর মালদহের ঘটনা যে তাকে যথেষ্ট বিচলিত করেছে তার প্রমানও পাওয়া গিয়েছে এ দিনের সভায়। বলছেন, “মালদহের সভাধিপতি একজন আদিবাসী। পদটা ছিল সংরক্ষিত। তাকে কোটি টাকার পাশাপাশি চাকরি অফার করা হয়েছে। তার পরিবার বলছে কংগ্রেসে থাকলে কিছু হবে না। তার চেয়ে টাকা নিয়ে জমি কিনে ভালো ভাবে থাকব। রাজনীতি আর করব না।”
তিনি দাবি করেন,“একজন এমএলএকে ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকবে কিনা জানি না। কিন্তু গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে।”
এ দিন তিনি দাবি করেন যে প্রলোভন, সন্ত্রাস আর কায়েমিস্বার্থ-এই তিন অস্ত্রে বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করছে তৃণমূল। তার দাবি কংগ্রেস এতে ঘাবড়াচ্ছে না বরং আক্রমণের মধ্য দিয়েই কংগ্রসকে মান্যতা দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। আর ভবিষ্যতের জন্য ভয় পেয়েই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আক্রমণ করছেন বলে দাবি করেন অধীর। তিনি বলেন, “ফারাক মাত্র ৩০ লক্ষ। ৭৭ হাজার বুথে ৩৮টি করে ভোট বেশি পেলেই তৃণমূল আর ক্ষমতায় আসত না। আর সেটা ভালো করে জানেন বলেই দিদি এই আক্রমণ নামিয়ে আনছেন।”